3ফান্ডামেন্টাল ব্রেকডাউন –
- ব্রেক্সিট এর প্রভাব – এই বছরের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল ব্রেক্সিট ইস্যু। অর্থাৎ ইউ জোট থেকে ব্রিটেন এর বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া। যার প্রভাব আমরা প্রত্যক্ষভাবে লক্ষ্য করেছি EUR এবং GBP এর সকল কারেন্সি পেয়ার সমুহের উপর। ২০১৬ সালে হওয়া ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের ভোটা অনুষ্ঠিত হবার পর থেকে এখন পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারে নি। যার ফল হিসাবে বিগত তিন বছর অর্থাৎ ২০১৬-২০১৯ সালের মধ্যে পরপর তিনবার জাতীয় নির্বাচনও হয়েছে যার প্রভাব আমরা পেয়েছি সরাসরি পাউন্ড এর সকল কারেন্সি পেয়ারে। ২০১৭ সালের আর্টিকেল ৫০ অনুমোদনের পর থেকে চুক্তি বাস্তবায়নের সময়সীমা কয়েক দফা পিছালেও এখন পর্যন্ত পরিস্কার কোনও সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারেনি ব্রিটিশ সরকার। সর্বশেষ, ২০১৯ এর ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে ডেমোক্রেট নেতা এবং বিদ্যমান প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এর ক্ষমতা গ্রহন এর পর থেকে নতুন মোড় নেয় ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ার বাস্তবায়ন। ধারনা করা হচ্ছে আগামি ৩১ শে জানুয়ারির মধ্যে চুক্তি বাস্তবায়ন করবে বিদ্যমান ব্রিটিশ সরকার। এমতাবস্থায়, পাউন্ড এর ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে আশঙ্কা।
- বাণিজ্য যুদ্ধ – বিগত বছরের ২য় প্রান্তিক থেকে শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন এর মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র, চীন এর তৈরি নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের উপর ১০%, ১৫% এবং ২৫% অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে। যার ফলে চীনা পণ্যের উপর গ্রাহককে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হবে। ফলস্ত্রুতিতে, আমেরিকার বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের চাহিদা কমে আসে যার প্রভাব পরে সরাসরি চীনা অর্থনীতির উপর। পাল্টা পদক্ষেপ হিসাবে, চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত পণ্যের উপর ঠিক একই হারে শুল্ক আরোপ এর ঘোষণা প্রদান করে এবং ফলাফল হিসাবে বড় বড় আমেরিকান প্রতিষ্ঠান গুলো একদিক থেকে বিপাকে পরে যায়। তার একটি বড় উদাহরন হচ্ছে, Apple তাদের চীনা বাজার এর মাধ্যমে উৎপাদিত আইফোন এর রেশিও কমিয়ে নিয়ে এসে সেটা পরবর্তীতে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে নিজস্ব উৎপাদন শুরু করে। এছারাও বাণিজ্য যুদ্ধ নিরসনে দুই দেশ কূটনৈতিক পর্যায়ে কয়েকধফা বসলেও তেমন কোনও সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারেনি। এখন পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলমান এবং এর প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও। বিশ্লেষকদের মধ্যে বিগত বছরের ক্ষতির পরিমান প্রায় ২০,০০০ কোটি ডলার এর কাছাকাছি।
- ট্রাম্প বনাম হুয়ায়ে – চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের সাথে যুক্ত হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর সাথে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়ায়ের কিছু ইস্যু নিয়ে বিরোধ। চীনা সরকার, তাদের উৎপাদিত সকল পণ্যের উপর নজরদারি করতে পারে এবং চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সরকারকে সকল ধরনের তথ্য প্রদান করতে বাধ্য থাকবে এই শর্তের কারনে, ট্রাম্প, প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান হুয়ায়ের তৈরি পঞ্চম প্রজম্নের নেটওয়ার্ক কিংবা 5G সহ বেশকিছু সেবার উপর নিশেধাজ্ঞা জারি করে। যার ফলাফল হিসাবে, চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান Qualcomm এবং Google তাদের এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম এর ব্যবহার বাতিল বলে ঘোষণা করে। এই নিশেধাজ্ঞা এর কারনে আন্তর্জাতিক বাজারে হুয়ায়ের বাজার নেমে আসে প্রায় ১৬% তবে এর ২ সপ্তাহের মাথায় বিদ্যমান এই আদেশ স্থগিত করে ট্রাম্প প্রশাসন।
- ট্রাম্পের অভিশংসন প্রক্রিয়া – বিগত বছরের শেষ এর দিকে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর উপর অভিশংসন কিংবা Impeachment এর ঘোষণা। প্রেসিডেন্ট হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ক্ষমতার অপ-ব্যবহার করছেন এই বিষয়ে মার্কিন পার্লামেন্ট কংগ্রেসে, হাউস স্পীকার ন্যান্সি পিলসি একটি অভিযোগ উত্থাপন করেন। এখানে বলা হয় প্রেসিডেন্ট হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প (i) ক্ষমতার অপ-ব্যবহার করছেন (ii) আসন্ন নির্বাচনে ডেমোক্রেট প্রার্থী জো-বাইডেন এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট এর সাথে ফোন আলাপ যা কংগ্রেসের নীতিমালা বিরোধী। ইতিমধ্যেই স্পীকার এর উত্থাপিত এই বিল এর উপর শুনানি হয় যার ফলাফল হিসাবে অভিযোগটি কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে সমর্থ পায় এবং সেটি কংগ্রেসের উচ্চকক্ষে শুনানির জন্য পাঠানো হয়। ধারনা করা হচ্ছে এই জানুয়ারি অধিবেশনে সেটি উত্থাপিত হতে পারে। যদি এখানে উল্লেখিত অভিযোগ সমুহের কোনও একটির প্রমান পাওয়া যায়, তাহলে ট্রাম্প এর থেকে ক্ষমতা চলে আসবে কংগ্রেসের কাছে এবং যা নিয়মনুসারে পরে ভাইস-প্রেসিডেন্ট এর কাছে চলে আসবে।
বিঃদ্রঃ উপরের বর্ণিত বিষয়গুলো শুধুমাত্র গুরুত্তের দিক থেকে উপস্থাপিত। এর বাইরেও আরও অনেক ফান্ডমেন্টাল বিষয় রয়েছে যা একটি আর্টিকেলে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করা সম্ভব নয়। এক কথায় ২০১৯ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি অনেক চড়াই-উৎরাই পার করেছে। কিন্তু তারপরও আমরা বলছি এই বছরটি ছিল ফরেক্স ট্রেডিং এর জন্য অনেকবেশী লাভজনক। কি! সন্দেহ হচ্ছে? তাহলে এবার চলুন কারেন্সি মার্কেট এর আপডেট দেখে নেয়া যাক।