ট্রেডারদের ট্রেডিং স্থান – আপনি যখন ফরেক্স ট্রেডিং করছেন, তাহলে আসলে সেই ট্রেডটি কোথায় সম্পন্ন হচ্ছে? আপনি হয়তোবা জানেন, রিটেইল ফরেক্স ট্রেডাররা বাস্তবিক অর্থে “REAL” ফরেক্স মার্কেটে কোনও ট্রেড করেননা।
যদি আসলেই এমন হয়, তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে ট্রেডাররা এই ট্রেড আসলে করছেন কোথায়? আপনি যখন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে কোনও “Buy” কিংবা “Sell” বাটন ক্লিক করেন তখন সেই অর্ডারটি আসলে কোথায় যায়?
আজকের আর্টিকেলটিতে আমরা সেই বিষয় সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।
ফরেক্স মার্কেট ইকোসিস্টেম
এন্ট্রি গ্রহনের জন্য অর্ডার করলে সেটি কোথায় সম্পাদিত হয় এটি বোঝার আগে, আমাদের প্রথমে বুঝতে হবে ফরেক্স মার্কেট ইকোসিস্টেমে আপনি (ট্রেডার) এবং ব্রোকারের আসল কাজ সম্পর্কে।
ফরেক্স মার্কেটের ম্যাকানিজম কিছুটা জটিল প্রকৃতির, তবে আমরা চেষ্টা করছি যতটা সহজ করে বিষয়গুলো আপনার জন্য উপস্থাপন করা যায়।
চলুন ধরে নেই, আপনার বাসার কাছেই একটি অনেক বড় আকারের লেক/খাল আছে। যেমন ধরুন হাতিরঝিল লেইক এর কথা বলছি।
ধরে নিন বড় আকারের এই খালটি হচ্ছে “ফরেক্স মার্কেট”
এখন বড় এই লেইক কিংবা খালটি কিন্তু খালি নয়। অর্থাৎ, এর মধ্যে অনেক ছোট ছোট নৌকা অবস্থান করছে।
এই নৌকাগুলোর এক একটির আকার কিংবা সাইজ এক এক রকমের।
ধরে নিন, হাতিরঝিল লেইকের মধ্যে হাজার খানেক নৌকা রয়েছে। এখন এটিকে যদি ফরেক্স মার্কেটের সাথে তুলনা করি, তাহলে ধরে নিব, ফরেক্স মার্কেটের মধ্যে অংশগ্রহনকারির সংখ্যাও হচ্ছে হাজারখানেক।
এই অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে রয়েছে, বিভিন্ন আকারের ব্যাংক, নন-ব্যাংকিং অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান, বড় আকারের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন আকারের ট্রেডিং ফার্ম, হেজ- ফান্ড, বড় আকারের একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান।
এদের মধ্যে কোনটির আকারে অনেক বড় এবং কোনটির আকার আবার ছোট।
উপরের উধাহরনে, বড় আকারের যেই নৌকাগুলোর কথা বলেছিলাম সেগুলো হচ্ছে, বড় আকারের বাণিজ্যিক ব্যাংক। যেমন ধরুন, Barclays, Citigroup, Deutsche Bank, HSBC, JP Morgan Chase, এবং UBS.
এদের কোনও কোনওটি, একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর থেকেও আকারে বড় হয়ে থাকে।
এই বড় বড় ব্যাংকগুলো, মাঝে মাঝে নিজেদের মধ্যেই সরাসরি ট্রেড করে থাকে। নিজেদের মধ্যকার এই ট্রেডকে, ট্রেডিং এর ভাষায় বলা হয় “bilateral trade”. অর্থাৎ, বলতে পারেন বড় বড় নৌকাগুলো নিজেদের মধ্যে “bilateral trade” করে থাকে।
যখন বড় এই নৌকাগুলো নিজেদের মধ্যে bilateral trade করে তখন এদের মধ্যে মাত্র দুইটি পক্ষই জানে, আসল কারেন্সি প্রাইস লেভেল সম্পর্কে এবং কোন প্রাইসে তারা ট্রেড করছেন। মার্কেটে অংশগ্রহনকারী অন্যান্য নৌকারা, প্রাইসের এই তথ্য সম্পর্কে জানতে পারেনা কিংবা জানে না।
বড় বড় এই ব্যাংকগুলো তখন তাদের বিভিন্ন গ্রাহকদের কাছে ভিন্ন ভিন্ন প্রাইস লেভেল প্রদান করে এবং কোনওভাবেই সেই প্রাইস লেভেলটি সবার (public) জন্য উন্মুক্ত করা হয়না। যার কারনে অন্য যারা ফরেক্স মার্কেটে অংশগ্রহন করছে তাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়, যে তারা যেই প্রাইসে ট্রেড করছে সেটি ভালো নাকি খারাপ!
হাতিরঝিল লেকে, যে শুধুমাত্র নৌকাই আছে বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। ধরে নিন, লেকটির ব্যাপ্তি এতটাই বড় যে এই লেকের মধ্যে অসংখ্য দ্বীপও রয়েছে।
এখানে এই দ্বীপগুলো হচ্ছে, ভিন্ন ভিন্ন স্থান যেখানে মুলত ট্রেডিং সংঘঠিত হয়ে থাকে।
ট্রেডিং করার স্থান
ট্রেডিং ভ্যানু কিংবা স্থানগুলো হচ্ছে, যেখানে ফরেক্স মার্কেটে অংশগ্রহনকারীরা একত্রিত হয়ে নিজেদের মধ্যে ট্রেড করতে থাকে।
অংশগ্রহনকারীরা যখন এই সকল ভ্যানু কিংবা স্থানে এসে ট্রেডিং এর জন্য একত্রিত হয়, তখন তারা সেই স্থানের বিভিন্ন ধরনের ট্রেডিং এর শর্তাদি মেনে চলতে বাধ্য হয়।
এই দ্বীপগুলো (ট্রেডিং এর স্থান কিংবা ভ্যানু) একটি মার্কেটপ্লেসের মতন কাজ করে অর্থাৎ, এখানে এসে ফরেক্স মার্কেটের অংশগ্রহনকারীরা ট্রেড্রিং কার্যাদি সম্পাদন করে থাকে। এই দ্বীপগুলোর অনেকটিই আবার এমনভাবে ট্রেডিং করার সুবিধা প্রদান করে যেখানে, ট্রেডাররা চাইলে নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে ট্রেড করতে পারে।
দেখতেই পাচ্ছেন, ট্রেডিং করার জন্য এই দ্বীপের সংখ্যা অনেক বেশী এবং শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট স্থানে এসেই ট্রেড করতে হবে বিষয়টি এমন নয় এবং প্রতিটি আলাদা আলাদা দ্বীপগুলোর ট্রেড করার জন্য প্রদর্শিত প্রাইসগুলোও হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন।
যেমন ধরুন, আপনি ১নং দ্বিপে ট্রেড করার জন্য গেলেন এবং জানতে পারলেন তাদের কাছে USD/JPY পেয়ার এর রেট হচ্ছে 110.00. যখন আপনি ২য় দ্বিপে গেলে একই ট্রেড করার জন্য তখন জানতে পারলেন তাদের কাছে এই কারেন্সি পেয়ার এর রেট হচ্ছে 110.01.
অর্থাৎ, সম্পূর্ণ ফরেক্স মার্কেটটি বেশকিছু খন্ডে বিভক্ত যেখানের এক একটি খন্ডে USD/JPY এর প্রাইস হচ্ছে এক এক রকমের। অর্থাৎ, প্রতিটি দ্বীপে- প্রটিটি কারেন্সি পেয়ার এর ভিন্ন ভিন্ন প্রাইস রয়েছে, তাদের লিকুইডিটির পরিমান ভিন্ন এবং ট্রেডিং ভলিউমও সম্পূর্ণ আলাদা।
সুতরাং ফরেক্স ট্রেডিং, বিভিন্ন ট্রেডিং স্থানে একই সাথে সংঘঠিত হয়।
যার মানে দ্বারায়, ট্রেডিং এর জন্য শুধু নির্দিষ্ট কোনও একটি স্থান কিংবা মার্কেট নেই। বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত এই মার্কেটগুলোর একসাথে হয়ে “ফরেক্স মার্কেটে” ট্রেড করে থাকে।
এখন আপনি ধরে নিতে পারেন “ফরেক্স মার্কেট” হচ্ছে এমন এক ধরনের নেটওয়ার্ক সিস্টেম যেখানে এক ছাদের নিচে বসে ট্রেডাররা ট্রেড না করে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রেড করতে থাকে।
যেমন ধরুন, কেউ ঢাকাতে বসে ট্রেড করছে কিংবা কিংবা কেউ সিলেটে বসে ট্রেড করছে কিংবা কেউ আছে রাজশাহীতে। কিন্তু এরা সবাই একই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ট্রেড করছে, ফরেক্স মার্কেটে।
এখন এই দ্বীপ কিংবা ট্রেডিং স্থানগুলোর আকার কিংবা ব্যাপ্তির পরিমানও এক এক রকমের হয়ে থাকে। এই আকার মুলত নির্ধারিত হয় সেখানে কি পরিমাণের ট্রেড হচ্ছে সেটির উপর। যেমন ধরুন, ঢাকাতে (দ্বীপ/ ট্রেডিং স্থান) সংঘঠিত ট্রেড এর ভলিউমের পরিমান হচ্ছে ১০০,০০০ অন্যদিকে, সিলেটে ট্রেডিং ভলিউম এর পরিমান হচ্ছে ৮০,০০০
এই হিসাবে সিলেটের থেকে ঢাকার আকার, অনেক বড়।
আবার এমনও আছে যে, এই দ্বিপে ট্রেড করতে হলে আপনাকে অর্থাৎ, অংশগ্রহনকারীকে অনেক বেশী ধনী হতে হবে। অর্থাৎ, এখানে শুরু অতিরিক্ত ধনী যেমন, মিলিয়নিয়াররা ট্রেড করার সুবিধা পাবেন। অন্যারা এখানে ট্রেড করার সুবিধা পাবেন না।
এমন শর্তের কারনে, শুধুমাত্র বড় বড় ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোই কেবল মাত্র ট্রেডিং এর সুবিধা পায়।
এই ধরনের দ্বীপ কিংবা ট্রেডিং স্থানগুলো মুলত “single-dealer platforms (SDPs)” নামে পরিচিত। এই স্থানে ট্রেড করতে পারে বড় আকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশ-বিশেষ। যেমন ধরুন, Autobahn (Deutsche Bank), BARX (Barclays), Cortex (BNP Paribas), Neo (UBS), and Velocity (Citi) গ্রুপ।
অন্যদিকে, এমনও হয়যে হাতিরঝিল লেইকের মধ্যে সবথেকে বড় আকারের যেই ২টি দ্বীপ রয়েছে, সেখানে শুধুমাত্র বড় আকারের নৌকাগুলো নোঙর করতে পারবে। অর্থাৎ, ট্রেডিং করার সুবিধা পাবেন।
তাহলে সহজভাবে যদি বলার চেষ্টা করি, তাহলে বিষয়টি হচ্ছে, শুধুমাত্র বড় ডিলাররা, হাতিরঝিলে লেইকে অবস্থিত বড় আকারের দ্বীপগুলো, নিজেদের মধ্যে বড় আকারের ট্রেড করার সুবিধা পায়।
এই ট্রডিং সিস্টেমে বলা হয় “interdealer market”.
ইন্টারডিলার মার্কেট
এই নামের প্রথম অংশ অর্থাৎ “Inter” এর অর্থ হচ্ছে “between” কিংবা “among” কিংবা “মধ্যবর্তী”।
Interdealer Market আবার “interbank market” নামেও পরিচিত কেননা এই ব্যাংকগুলো পৃথিবীর বড় বড় আন্তর্জাতিক মানের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য কাজ করে, যাদের পৃথিবী ব্যাপী গ্রাহক রয়েছে।
এই ব্যাংকগুলোকে ট্রেডিং এর ভাষায় বলা হয় “bulge bracket” ব্যাংক।
Interdealer market এর মাধ্যমে যেই দ্বীপে(ট্রেডিং স্থান) ট্রেড সংঘঠিত হয় সেটিকে বলা হয় “interdealer platforms” (IDPs). এটি মুলত একটি ইলেক্ট্রনিক ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম যেখানে সবাই নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে ট্রেড করে থাকে। উধারন হিসাবে বলতে পারি, EBS Market এবং Refinitiv Matching.
ফরেক্স মার্কেটের ইন্টারডিলার অংশে মুলত ট্রেড হয়, বিভিন্ন ফরেক্স ডিলারদের মধ্যে। এই ডিলারদের বিভিন্ন ক্যাটাগরির গ্রাহক থেকে যেমন, আমদানি-রফতানি, এসেট ম্যানেজার, হেজ-ফান্ড, এমনকি অন্যান্য ছোট আকারের রিটেইল ফরেক্স ব্রোকার।
২০/৩০ বছর আগেও শুধুমাত্র বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো কেবলমাত্র এই ট্রেডিং করার সুবিধা পেত। কেননা, এদের এক একজন এটতাই বড় ছিল তারা ছোট আকারের কারও সাথে ট্রেড করতে চাইত না।
কিন্তু এখন সেই অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখন মাঝারি সারির প্রতিষ্ঠানগুলোও, এই বড় বড় স্থানে ট্রেড করার সুবিধা পায়।
আমরা এর থেকে আর বেশী গভিরে যাবনা, কেননা এতে করে আপনি বিষয়গুলোকে প্যাচ লাগিয়ে ফেলতে পারেন। শুধু মনে রাখুন, বড় আকারের নৌকাগুলো (ব্যাংক), মাঝারি আকারেরে নৌকা (ছোট প্রতিষ্ঠান) গুলোকে নিজ নামে ট্রেড করার সুবিধা প্রদান করে। যার কারনে, ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো তখন, বড় আকারের ব্যাংক গুলোর সাথে ট্রেড করার সুবিধা পায়।
যেহেতু ছোট নৌকা (প্রতিষ্ঠান) গুলো নিজ নামে ট্রেড করার সুবিধা পাচ্ছে, তাই বড় আকারের নৌকাগুলো (ব্যাংক) এদের উপর একটি ফি কিংবা চার্জ ধার্য করে। এই চার্জ মুলত নির্ধারিত হয়, ঠিক কি পরিমান কিংবা ভলিউম এর ট্রেড হচ্ছে সেটির উপর।
ট্রেডিং এর এই সুবিধা প্রদানের বিষয়টি, ফরেক্স এর ভাষায় “prime brokerage” নামে পরিচিত। যেখানে, বড় নৌকাগুলো (ব্যাংক) “prime broker” (কিংবা “PB”) নামে পরিচিত এবং মাঝারি নৌকাগুলো (ছোট প্রতিষ্ঠান) – প্রাইমব্রোকারের “Client” হিসাবে পরিচিত।
Prime broker তখন, ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোকে (বেশী ছোট নয়) নিজেদের (PB) হাই ট্রেডিং প্রোফাইল, রিস্ক স্কোর রেটিং, ফান্ড ব্যবহার করে যে কারও সাথে, যেকোনো স্থানে, ট্রেড করার সুবিধা প্রদান করে।
অর্থাৎ, এই সুবিধা ব্যবহার করে ছোট আকারের নৌকাগুলো তখন বড় বড় জাহাজের সাথে ট্রেড করার সুবিধা পায়।
মনে রাখবেন, ইন্টারডিলার মার্কেটে হচ্ছে এমন একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা (ট্রেডিং এর স্থান) যা মুলত ব্যাংক এবং বড় বড় নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মধ্যে কারেন্সি ট্রেড করে থাকে। এই ট্রেড মুলত ইলেকট্রনিক মাধ্যম কিংবা ফোন কল এর মাধ্যমে সংঘঠিত হয়।
অর্থাৎ, আপনি যখন আপনি দেখবেন “interdealer market” কিংবা “interbank market” শব্দটি তখন বুঝবেন, এটি হচ্ছে মুলত একটি নেটওয়ার্ক যেখানে বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মধ্যে কারেন্সি লেনদেন করে থাকে।
এখন interdealer market সিস্টেমে প্রতিষ্ঠানগুলো যেই রেটে কারেন্সি এক্সচেঞ্জ করে থাকে সেই এক্সচেঞ্জ রেট তখন অন্যান্য অর্থাৎ, ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে “reference” rates হিসাবে পাঠানো হয়ে থাকে।
বড় বড় নৌকাদের থাকে প্রাপ্ত এই এক্সচেঞ্জ রেটগুলো, তখন ছোট নৌকা এবং দ্বীপগুলো নিজেদের জন্য ব্যবহার করে।
আপনার ব্রোকার এই “reference” rate গুলো আপনার ট্রেডিং টার্মিনালে প্রদর্শন করতে থাকে। তবে ব্রোকার এক্ষেত্রে প্রাপ্ত এক্সচেঞ্জ রেট এর সাথে কিছু অতিরিক্ত “markup fee” কিংবা চার্জ যুক্ত করে আপনার ট্রেডিং টার্মিনালে (MT4/MT5) প্রদর্শন করে।
এখন আমরা যেহেতু রিটেইল ফরেক্স ব্রোকারদের কথা বলছি, তাহলে চলুন দেখে নেই ট্রেডিং মার্কেটের গঠন প্রণালীতে এদের আসল অবস্থান কোথায়?
রিটেইল ফরেক্স ব্রোকার
আসলে এদের অবস্থান হচ্ছে একদম ছোট স্থানে।
এই রিটেইল ফরেক্স ব্রোকারদের মধ্যেও অনেকেই আছে, যাদের ট্রেডিং ভলিউমের পরিমান, অন্যদের থেকে অনেক বেশী। অর্থাৎ, ফরেক্স মার্কেটে অংশগ্রহনকারী হিসাবে এরাও ছোট কিংবা অন্যান্য ছটো ব্রোকারের তুলনায় কিছুটা বড়।
অর্থাৎ, অনেক বড় রিটেইল ফরেক্স ব্রোকারও যেমন আছে, তেমনই অনেক ছোট ব্রোকারও রয়েছে।
মনে রাখবনে, রিটেইল ফরেক্স ব্রোকাররা নিজেদের মধ্যে ট্রেড করতে পারেনা। অর্থাৎ, তাদের অন্য কারও সাথে সরাসরি ট্রেড করার ক্ষমতা নেই।
ট্রেড করার জন্য এরা নিজেদের, প্রথমে বড় আকারের নৌকার (ব্যাংক) এর সাথে যুক্ত হয়, তারপর এই বড় নৌকাগুলোর নাম ব্যবহার করে ট্রেড করে থাকে। নাম ধারনের এই সম্পর্কেকে ট্রেডিং এর ভাষায় বলা হয়, prime broker (“PB”) relationship.
বড় আকারের নৌকাগুলো তখন হয়ে যায় ছোট আকারের নৌকাগুলোর, প্রাইম ব্রোকার কিংবা PB.
অর্থাৎ, এই সম্পর্কের মাধ্যমে একটি প্রাইম ব্রোকার, রিটেইল ফরেক্স ব্রোকারকে রিপ্রেজেন্ট করে এবং রিটেইল ফরেক্স ব্রোকারের এর সকল ট্রেড এবং লেনদেনগুলোকে, নিজ নামে সম্পাদন করতে থাকে।
এখন বড় আকারের নৌকাগুলো, ছোট আকারের নৌকাগুলোর সাথে সরাসরি ট্রেডে জড়াতে চায় না কেননা বড়রা মনে করে, ছোট আকারের নৌকাগুলো ট্রেড করার জন্য রিস্কি। সুতরাং, এরা ছোট নৌকাগুলোকে ফরেক্স মার্কেটে ট্রেড করা থেকে বিরত রাখতে চায়।
সৌভাগ্যবশত আরও একধরনের নৌকা আছে যারা প্রাইম ব্রোকারের সাথে সম্পর্কে স্থাপনের মাধ্যমে ছোট আকারের নৌকাগুলোকে ট্রেড করার সুবিধা প্রদান করে। অর্থাৎ, মাঝারি আকারের এই নৌকাগুলো তখন ছোট আকারের নৌকাগুলোর জন্য প্রাইম ব্রোকার হিসাবে কাজ করে।
এই ধরনের মধ্য আকারের নৌকাগুলো ট্রেডিং এর ভাষায় বলা হয় “Prime of Prime” কিংবা “PoP”
Prime of Prime (PoP) হচ্ছে এমন একটি প্রতিষ্ঠান যারা Prime Broker (PB) দের সাথে সম্পর্কে স্থাপনের মাধ্যমে ফরেক্স মার্কেটে অংশগ্রহনকারী অন্য ছটো ব্রোকারদের সেবা প্রদান করে থাকে। অর্থাৎ, PoP রা মুলত – বড় আকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠান এর সাথে ছোট আকারের ব্রোকারদের ট্রেডিং করার মাঝখানে যেই “গ্যাপ” সেটি পুরন করে করে, রিটেইল ব্রোকারদের লিভারেজ প্রদান করে যাতে তারা Prime Broker (PB) এর সাথে সম্পর্কে তৈরি করতে পারে।
সহজ কথায় PoP রা, ছোট ব্রোকারদের নিজেদের মধ্যে দিয়ে ট্রেড করার সুবিধা প্রদান করে।
এখন যদি আমরা এভাবে হিসাব করি,
- বড় নৌকা গুলো হচ্ছে, বড় বড় “জাহাজ“
- মাঝারি নৌকাগুলো হচ্ছে “লঞ্চ“
- ছটো নৌকাগুলো হচ্ছে, ছোট আকারের “ট্রলার”
এখন যদি রিটেইল ব্রোকারের আকার হয় এই ট্রলার এর মতন, তাহলে আপনি যখন এর মাধ্যমে ট্রেড করেন – তখন আপনার অবস্থান হয় কোথায়?
আপনি কিন্তু কোনও নৌকার মধ্যে অবস্থান করেন না।
কি বলেন? তাহলে আমি কি?
আপনি ইতিমধ্যেই বুঝে গেছেন, রিটেইল ফরেক্স ব্রোকারদের জন্যই ফরেক্স মার্কেটে সরাসরি অংশ নেয়া অনেক ঝামেলা এবং সমস্যার।
যেহেতু বড় বড় জাহাজরা, ছোট ট্রলার এর সাথে ট্রেড করতে আগ্রহী থাকে না তাহলে এই জাহাজরা আপনার মতন একজন রিটেইল ট্রেডার এর সাথে কেন ট্রেড করতে আগ্রহী হবে?
তাহলে আমি (ট্রেডার) কে? ফরেক্স মার্কেটে আমার অবস্থান কি?
রিটেইল ফরেক্স ট্রেডার
একজন রিটেইল ট্রেডার নিজে কোনও ট্রলার কিংবা নৌকা নয়।
রিটেইল ফরেক্স ব্রোকার একটি ট্রলার হিসাবে মার্কেটে অংশ নিলে, আপনি সেই ট্রলারের একজন যাত্রী মাত্র। কিংবা যদি বলি, আপনি সেই ট্রলারের মধ্যে থাকা এক্যুরিয়ামের একটি মাছ মাত্র!
মনে রাখবেন,
রিটেইল ফরেক্স ব্রোকাররা নিজ থেকে কখনোই ফরেক্স মার্কেটে ট্রেডিং করে না।
আপনার ব্রোকার শুধুমাত্র আপনার ট্রেড করার জন্য একটি মার্কেট তৈরি করে।
আপনি কেবল আপনার ব্রোকার এর সাথে ট্রেড করেন।
আপনি যখন কোনও অর্ডার গ্রহন করেন, আপনার ব্রোকার তখন সেই অর্ডারটি আপনার কাছ থেকে গ্রহন করে। অর্থাৎ, সেই অর্ডারটি (Buy/Sell) ব্রোকার ব্যাতিত, অন্য কারও কাছে যায় না।
এখানে অর্ডার হচ্ছে মুলত কোনও ট্রেডিং এসেট “Buy” কিংবা “Sell” করার জন্য একটি নির্দেশনা, যা আপনি ব্রোকারের টার্মিনাল এর মাধ্যমে ব্যবহার করেন।
একজন রিটেইল ফরেক্স ট্রেডার হিসাবে আপনি যখন কারেন্সি পেয়ারে “BUY” কিংবা “SELL” অর্ডার করেন তখন ২য় পক্ষ হিসাবে আপনার ব্রোকার অবস্থান করে।
প্রতিটি রিটেইল ফরেক্স ব্রোকার এর ক্ষেত্রে এটি সত্য।
কি বিশ্বাস হচ্ছে না? আপনি যেই ব্রোকারে ট্রেড করছেন সেই ব্রোকারের “Customer Agreement” ভালো করে পড়ে নিন এবং বোঝার চেষ্টা করুন। কেননা আপনার ব্রোকার যদি ভালো মানের হয়, তাহলে বিষয়গুলোকে খুব স্পষ্ট করে তারা লিখে রাখবে।
যদিও আপনার ব্রোকার, এমন কিছু সুযোগ-সুবিধা প্রদান করবে যার মাধ্যমে আপনার মনে হবে আপনি নিজেই সরাসরি ফরেক্স মার্কেটে ট্রেড করছেন। আসলে ধরে নিবেন, এটি একটি “সিমুলেশন / simulation” মাত্র।
অর্থাৎ, আপনার ব্রোকার ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে আপনাকে আরও ভাল করে সুবিধা প্রদানের জন্য, ফরেক্স মার্কেটের মতন একটি ট্রেডিং পরিবেশ কিংবা অবস্থার তৈরি করবে, যাতে করে আপনি ভালো ফিল করেন।
যেমন ধরুন, ব্রোকার ট্রেডিং টার্মিনালে কারেন্সি পেয়ারের যেই প্রাইস প্রদর্শন করে, সেটি রিয়েল ফরেক্স মার্কেট প্রাইস এর মতনই। অর্থাৎ, ধরে নিন – আয়নায়, প্রতিচ্ছবি দেখছেন।
তবে অবশ্যই মনে রাখবেন, আপনি যেই এন্ট্রি গ্রহন করছেন কিংবা ক্লোজ করছেন, সেটি কিন্তু অন্য কোনও ট্রেডারের সাথে সংঘঠিত হবে না। শুধুমাত্র আপনার ব্রোকার, ২য় পক্ষ হিসাবে আপনার ট্রেডের বিপরীত পাশে অবস্থান করবে।
আপনার ব্রোকার হচ্ছে, আপনি ট্রেডিং এর জন্য যেসকল এন্ট্রি গ্রহন করেন সেটির একমাত্র স্থান। ফরেক্স ট্রেডিং এর ভাষায় এটিকে বলা হয় “execution venue”.
এক্সিকিউশন ভ্যানু
এই “এক্সিকিউশন ভ্যানু” এর অর্থ হচ্ছে, এমন “একটি স্থান, যেখানে সকল ধরনের অর্ডার কিংবা এন্ট্রি হয় এবং সেই অর্ডারগুলো এক্সিকিউট করা হয়ে থাকে।”
যেহেতু আপনি শুধুমাত্র ব্রোকারের সাথে ট্রেড করছেন অর্থাৎ, রিয়েল ফরেক্স মার্কেট থেকে এটি (ব্রোকারের টার্মিনাল) সম্পূর্ণ ভিন্ন, কিন্তু ফরেক্স মার্কেটের সাথে সাথেই ব্রোকারের টার্মিনালে বিদ্যমান কারেন্সি পেয়ার কিংবা অন্যান্য ট্রেডিং এসেটগুলোর প্রাইস মুভ করতে থাকে।
আপনি যখন ট্রেড করছেন, সবসময়ই মনে রাখবেন আপনি ব্রোকারের “ইন্টারনাল ট্রেডিং মার্কেটেই” অবস্থান করছেন। অর্থাৎ, আপনি ব্রোকারের একাউন্টে যেই পরিমান ফান্ড ডিপোজিট করেন, সেই ফান্ড ব্রোকার ছাড়া অন্য কারও কাছেই যায় না।
শুধুমাত্র যদি এমন কোনও অবস্থার তৈরি হয়, যখন হেজ ট্রেডিং এর প্রয়োজন পড়ে তখনই কেবল ব্রোকার, নিজ ফান্ড ব্যবহার করে থাকে। তবে এই হেজ ট্রেডিংগুলো শুধুমাত্র ব্রোকারই সম্পন্ন করে থাকে। আপনি না। (এই টপিকটি নিয়ে আমরা পড়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করবো।)
এমনকি আপনি অন্য কোনও ট্রেডারের সাথেও ট্রেড করার সুবিধা পান না। এমনকি, একই ব্রোকারের অন্য ট্রেডাররাও, এক জন-অন্য জনের সাথে ট্রেড করতে পারেন না। সবাই শুধুমাত্র ব্রোকারের সাথে ট্রেড করতে থাকেন এবং একমাত্র ব্রোকারই, সকল ট্রেডারদের এন্ট্রির বিপরীতে অবস্থান করতে থাকে।
অর্থাৎ, আপনি ইক্যুরিয়াম অন্যান্য মাছের সাথে অবস্থান করবেন না। আপনি এবং অন্য সকল ট্রেডারদের সবাই নিজ নিজ এক্যুরিয়ামে, আলাদা হয়ে ব্রোকারের সাথে ট্রেড করবে।
রিটেইল ট্রেডারদের, সরাসরি ফরেক্স মার্কেটে অবস্থান করে ট্রেড করার সুযোগ নেই। ট্রেডাররা কেবলমাত্র রিটেইল ব্রোকারদের সাথেই ট্রেড করার সুবিধা পায়।
এখন যদি আপনার মনে হয়, আপনি ফরেক্স মার্কেটের অন্যান্য ট্রেডারদের সাথে ট্রেড করবেন অর্থাৎ, ট্রেডিং এর ২ পক্ষের একজন হবেন আপনি এবং অন্যজন হবে, অন্য ট্রেডার কিন্তু কোনও ব্রোকার নয়, তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাকে institutional FX trader হতে হবে।
প্রাতিষ্ঠানিক ফরেক্স মার্কেট
এই জন্য আমরা রিয়েল ফরেক্স মার্কেটকে মুলত “Institutional FX Market” নামে ডেকে থাকি।
Institutional Market এর ক্ষেত্রে, রিটেইল ফরেক্স ব্রোকাররা পরিচিত থাকে “retail aggregators” নামে।
এই নামের কারন হচ্ছে, রিটেইল ফরেক্স ব্রোকাররা তাদের গ্রাহকদের পজিশনগুলোর নেট ভ্যালু (সব ফান্ড এর যোগফল) বের করে সেটি হেজিং এর উদ্দেশে ব্যবহার করে থাকে। এরপর ব্রোকার, এই হেজ ফান্ডগুলোকে institutional FX market এর কাছে পাঠিয়ে, নিজেদের রিস্ক ম্যানেজ করে থাকে। (ব্রোকার কিভাবে রিস্ক ম্যানেজ করে এই বিষয়ে আমরা বিস্তারিত পড়ে জানবো)।
যদিও আপনার ব্রোকার চাইলে Institutional FX Market এ অংশ নিয়ে ট্রেড করতে পারে কিন্তু আপনি সেটি পারবেন না। কেননা আপনার সেই ক্ষমতা নেই।
আপনি শুধুমাত্র আপনার ব্রোকারের ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে (MT4/MT5) যেই প্রাইস দেখেতে পান, সেই পর্যন্তই আপনার ক্ষমতা। অর্থাৎ, ব্রোকার যেই প্রাইস আপনাকে অফার করবে ট্রেড পজিশন কিংবা এন্ট্রি গ্রহনের জন্য, আপনাকে সেই প্রাইসই মেনে নিতে হবে।
ট্রেডিং করার জন্য আপনি যেই ইলেকট্রনিক ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেন সেটি আপনাকে শুধুমাত্র ব্রোকারের সাথে যুক্ত হবার একটি মাধ্যম (রাস্তা) হিসাবে কাজ করে।
মনে রাখবেন, আপনি নিজ থেকে সরাসরি ফরেক্স মার্কেটে অংশ নিতে পারবেন না, ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে ব্রোকারের সাথে, আপনার ট্রেডিং সম্পর্ক স্থাপনের জন্য একটি মাধ্যম (নেটওয়ার্ক) মাত্র।
আপনি এই ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে শুধুমাত্র ব্রোকারে লেনদেন জনিত কাজ করে থাকেন। এছাড়া, আপনার আর কোনও ক্ষমতা নেই। অর্থাৎ, আপনি চাইলেও ব্রোকারের অন্যান্য ট্রেডারদের সাথে ট্রেড করার ক্ষমতা পাবেন না।
সহজ কথায়,
আপনি যখন কোনও কারেন্সি পেয়ারে BUY বাটন ক্লিক করেন তখন, ব্রোকার হবে সেটির SELLER এবং অন্যদিকে যখন SELL বাটন ক্লিক করবেন, তখন ব্রোকার হবে সেটির BUYER.
রিটেইল ফরেক্স ব্রোকারদের কাজই হচ্ছে, নিজ ট্রেডারদের জন্য ট্রেডিং মার্কেট তৈরি করা। তাই ব্রোকারগুলো মার্কেট মেইকার হিসাবে কাজ করে।
মার্কেট মেইকার কি, কিভাবে ব্রোকার মার্কেট মেইক করে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য অনুগ্রহ করে রেফারেন্স হিসাবে “Market Make কি?” এই আর্টিকেলটি পড়ে নিতে পারেন।
যেহেতু institutional FX market এ রিটেইল ফরেক্স ট্রেডারদের অংশ নেয়ার কোনও সুযোগ নেই তাই রিটেইল ফরেক্স ব্রোকার, ট্রেডারদের জন্য Market Making করে থাকে। যাতে করে ট্রেডাররা অনুমানের ভিত্তিতে ট্রেড করার সুবিধা পায়।
ট্রেড করার এই সুবিধা প্রদান করার জন্য, ব্রোকার – ট্রেডারদের একটি ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম (MT4/MT5) প্রদান করে যেখানে ট্রেডার, বিভিন্ন কারেন্সির প্রাইস অনুমানের উপর ভিত্তি করে “BUY” কিংবা “SELL” পজিশন কিংবা এন্ট্রি গ্রহন করতে পারে।
অর্থাৎ, ট্রেডার হিসাবে আপনি শুধুমাত্র ব্রোকারেই অর্ডার ওপেন এবং ক্লোজ করার সুবিধা পান।
আপনি (ট্রেডার) যখন কোনও পজিশন ওপেন করেন, এর অর্থ হচ্ছে আপনি একটি চুক্তির মধ্যে প্রবেশ করলেন যেটি দুইটি পক্ষঃ আপনি এবং ব্রোকারের মধ্যে সংঘঠিত হয়।
ট্রেডিং এর ভাষায় এই চুক্তিকে বলা হয় CFDs কিংবা rolling spot FX contracts.
এই চুক্তিটি শুরু হবে মুলত আপনার মাধ্যমে এবং এটি ক্লোজ করার ক্ষমতা রাখবে শুধুমাত্র আপনার ব্রোকার। অর্থাৎ, এই চুক্তিটি অন্য কোনও পক্ষের সহায়তায় ক্লোজ করা সম্ভব নয়।
ট্রেডিং টার্মিনালে আপনি যেই প্রাইস দেখতে পান সেটি মুলত আপনার ব্রোকার, institutional FX market থেকে রিয়েল-টাইম “price feeds” এর মাধ্যমে, আপনার সামনে উপস্থাপন করে। মনে রাখবেন, আপনার ব্রোকারই কেবল আপনার বিপরীতে ট্রেড করে থাকে, অন্য কেউ নয়!
এখন প্রশ্ন হতে পারে, এত কিছু জেনে আমি কি করবো? আমি ভাই একাউন্টে ফান্ড ডিপোজিট করে ট্রেড করবো, প্রফিট করে ফান্ড তুলে নিয়ে, নাকে সরিষার তেল দিয়ে ঘুমাবো। ব্রোকার কি করলো? কিভাবে করলো? কেন করলো? কবে করলো? কার মাধ্যমে করলো? এগুলো জেনে আমার কাজ কি?
যেহেতু ব্রোকার আপনার গৃহীত এন্ট্রির বিপক্ষে অবস্থান করে, তাই এখানে দুই পক্ষের মধ্যে স্বার্থের একটি সম্ভাব্য দ্বন্দ্বের তৈরি হয়।
প্রশ্ন হতে পারে কিভাবে?
এখন যদি বিষয়টিকে ব্রোকারের পক্ষে রেখে চিন্তা করি, তাহলে আপনি ট্রেডে লস করলেই ব্রোকারের জন্য প্রফিটেবল। এটি মুলত ট্রেডারের চিন্তার সাথে বিপরীতমুখী কেননা, ট্রেডার সবসময়ই চায় প্রফিট করতে।
আমার কিছুক্ষণ আগে, একটি বাক্য ব্যবহার করেছি “স্বার্থের একটি সম্ভাব্য দ্বন্দ্বের” । এখানে “সম্ভাব্য” শব্ধটি, এই জন্য ব্যবহার করা হয়েছে কেননা আপনার (ট্রেডার) এবং ব্রোকারের মধ্যেকার এই “দ্বন্দ্ব” সমাধান করার বেশ কিছু উপায় কিংবা মাধ্যম রয়েছে।
এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা পরে আরও বিস্তারিত আলোচনা করবো। তবে এখন শুধু এতটুকু মনে রাখুন, ব্রোকার আপনার কাছে যত ভালই হোক না কেন, ট্রেডারের সাথে ব্রোকারের এই দ্বন্দ্ব / বিবাদ থাকবেই।
Counterparty Risk
আসলে এই বাক্যটির ভালো বাংলা সমার্থক অর্থ, আমাদের জানা নেই। তাই বাধ্য হয়ে ইংরেজি ব্যবহার করতে হচ্ছে। আসলে, ট্রেডিং এর সাথে এমন অনেক শব্দ, বাক্য আছে যেগুলোর ভাল বাংলা অর্থ আমাদের জানা নেই এবং গুগল করেও বের করতে পারিনি।
ধরে নিতে পারেন এটি আমাদের ব্যর্থতা।😥😪
আমাদের প্রকাশিত বিভিন্ন আর্টিকেলগুলো পড়ার সময় আপনার যদি মনে হয়, কোনও ইংরেজি শব্দের বাংলা অর্থ আপনি জানেন, তাহলে অনুগ্রহ করে নিচের কমেন্ট সেকশনে আমাদের জানাবেন।
“Counterparty” আক্ষরিক বাংলা অর্থ হচ্ছে, বিপক্ষে অবস্থানকারী। যেমন, সংসদে নতুন কোনও বিল কিংবা আইন পাস করার সময় সরকারী দল বিলটির পক্ষে ভোট দেয় এবং বিরোধীদল বিলটির বিপক্ষে অবস্থান গ্রহন করে। এখানে এই “বিরোধীদল হচ্ছে – Counterparty“.
চলুন এবার টপিকে দিরে যাই…..
যেহেতু একমাত্র ব্রোকারই আপনার ট্রেডের বিপরীত অবস্থান করে, তাই ট্রেডিং এর ভাষায় ব্রোকার হচ্ছে আপনার sole counterparty, যার কারনে ট্রেডারের জন্য ব্রোকার যেসকল কাজ করতে বাধ্য সেটি ব্রোকার পূরণ নাও করতে পারে। ট্রেডার হিসাবে বিষয়টি আপনার জন্য কিছুটা রিস্কি।
এই রিস্ক, মুলত counterparty risk হিসাবে পরিচিত।
মুলত, একটি লেনদেন সংঘঠিত করার জন্য দুইটি পক্ষের প্রয়োজন হয়। ট্রেডার হিসাবে আপনি হচ্ছেন একটি পক্ষ এবং যার সাথে আপনি লেনদেনটি করতে চান তিনি হচ্ছেন, অপর পক্ষ। ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে ব্রোকারই হচ্ছে আপনার Counterparty.
মনে রাখবেন, এই Counterparty ছাড়া কোনও লেনদেন সংগঠিত কিংবা সম্পন্ন হবার সুযোগ নেই।
একটি লেনদেন করার মধ্যে যখন buyer এবং seller অবস্থান করে, তখন তারা দুজনই একে অন্যের Counterparty হিসাবে বিবেচিত হন। অর্থাৎ,
- Buyer হচ্ছে Seller এর counterparty
- Seller হচ্ছে Buyer এর counterparty
ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে কাউন্টারপার্টি হচ্ছে, যারা সেই ট্রেড এর দুই পাশে অবস্থান করে। যেমন ধরুন, Buyer হচ্ছে Seller এর counterparty
এখানে, আপনি (buyer) এবং আপনার ব্রোকার (seller) দুজনেই হচ্ছেন, “প্রধান পক্ষ” ট্রেডিং এর ভাষায় যেটিকে বলা হয় “principals”.
“principals” হচ্ছে মুলত যারা একটি চুক্তির মধ্যে অবস্থান করে। সুতরাং, একজন buyer হিসাবে আপনি যেমন principal, তেমনই একজন Seller হিসাবে আপনার ব্রোকারও principal হিসাবে বিবেচিত।
মুলত এই কারনে, ফরেক্স ব্রোকার আসলে কোন ফরেক্স “ব্রোকার” নয়, এরা হচ্ছে মুলত ফরেক্স “ডিলার“।
“ব্রোকার” হচ্ছে যারা মুলত আপনার পক্ষের হয়ে, আপনি এবং অন্য কোনও কাউন্টারপার্টির মধ্যে একটি ডিল পরিচালনা করেন। অন্যভাবে যদি বলি, তাহলে আপনি যেই এন্ট্রি নিচ্ছেন সেটি অন্য কোনও buyer কিংবা seller এর সাথে ম্যাচ করার কাজটি করে এই ব্রোকার।
সুতরাং, আমরা বলতে পারি, একটি ফরেক্স ব্রোকার আসলে সত্যিকার অর্থে কোনও ব্রোকার নয় কেননা এরা আপনার গৃহীত ট্রেডের কাউন্টারপার্টি হিসাবে অবস্থান করে। কেননা ব্রোকার তখন সেই ট্রেডের অন্য প্রান্তের principal হিসাবে কাজ করে।
Counterparty risk, যাকে বলা হয় default risk কিংবা যেটি counterparty credit risk (CCR) হিসাবে পরিচিত। এটি এমন একধরনের রিস্ক, যেখানে চুক্তি অনুসারে যে পরিমান অর্থ পরিশোধ করার কথা সেটি কাউন্টারপার্টি প্রদান করেনা।
যেমন ধরুন, দুজন ব্যাক্তি যদি একটি ট্রেডে চুক্তিবধ্য হয় এবং কারও যদি সেই ট্রেডটিকে ভেরিফাই করার ক্ষমতা না থাকে, তাহলে এমনওত হতে পারে, কোনও একজন সেই চুক্তি থেকে বের হয়ে যেতে পারে কিংবা লেনদেন ক্লোজ হবার সময় সেই পরিমান অর্থ তার কাছে নাও থাকতে পারে।
যেহেতু আপনি লেনদেন করার জন্য শুধুমাত্র ব্রোকারের উপর নির্ভরশীল, এই কারনে আপনি চাইলেও গৃহীত পজিশন নিজ ব্রোকার থেকে অন্য ব্রোকারে ট্র্যান্সফার করে নিতে পারবেন না। অর্থাৎ, আপনি ফেসে গেলেন!
যদি পুনরায় বিষয়গুলোকে বিশ্লেষণ করি –
আপনি যখন কোনও ট্রেডে প্রফিট করবেন তখন, কাউন্টারপার্টি লস করবে। এখন যদি আপনার কাউন্টারপার্টি অর্থাৎ, আপনার ব্রোকার যদি – আপনার প্রফিট এর পরিমান ফান্ড প্রদানে অস্বীকৃতি জানায় তাহলে আপনি পুরাই চিপায় পরে যাবেন।
চিন্তায় পরে গেলেন? কিছু উধাহরন দিচ্ছি ….
ধরুন অন্য কোনও ট্রেডার, আপনার মতন ব্রোকারে, বড় আকারের (লট) একটি এন্ট্রি অর্ডার গ্রহন করল, কিছুক্ষণ পর প্রাইস তার পক্ষে রকেটের গতিতে মুভ করতে লাগলো, যার মাধ্যমে ট্রেডার একরাতেই মিলিয়ন ডলার প্রফিট করতে সক্ষম হল। অর্থাৎ, jackpot! 🚀
সেই ট্রেডার, এত বড় আকারের প্রফিট করতে সক্ষম হল যা প্রদান করতে ব্রোকার অপারগ! অর্থাৎ, ব্রোকারের কাছে এই ব্যাপক আকারের প্রফিট প্রদানের মতন কোনও ফান্ড নেই।💀
যদি স্টকমার্কেটের কথা চিন্তা করি তাহলে, তাদের মধ্যে একটি পক্ষ থাকে যারা Buyer এবং Seller এর মধ্যে অবস্থান করে এই ধরনের সিচুয়েশন সামাল দেয়ার কাজ করেন। এদের বলা হয় “clearing house”, এরা মুলত দুই পক্ষের চুক্তির কার্যাদি সম্পাদন করে থাকে। কিন্তু ফরেক্স মার্কেটে এই ধরনের কোনও “clearing house” এর অস্তিত্ব নেই।
এর মুল কারন হচ্ছে, ফরেক্স মার্কেট হচ্ছে over-the-counter (“OTC”) মার্কেট.
OTC মার্কেট এর ক্ষেত্রে, ৩য় কোনও পক্ষের অবস্থান করা এবং ব্রোকার থেকে আপনি যেই পরিমান টাকা পান সেটির নিশ্চিত করারও কোনও সুযোগ নেই।
ধরে নিন, OTC মার্কেটের লেনদেন হয় buyer এবং seller সরাসরি উপস্থিতিতে। এই দুই ব্যাক্তি তখন নিজেদের মধ্যে চুক্তি করে লেনদেন করার জন্য সম্মত হয়।
যেহেতু এই লেনদেন সংঘঠিত হয় দুই পক্ষের সামনাসামনি অবস্থানে, এই কারনে ৩য় কোনও পক্ষ কিংবা পেমেন্ট সিস্টেম কিংবা ব্যাংক এর উপস্থিতি থাকেনা। অর্থাৎ, লেনদেনের কোনও সুরক্ষা ব্যবস্থাও থাকে না।
এরকম অবস্থায় আপনি তখন, ওই ব্রোকারের বিরুদ্ধে রেগুলেটরি এজেন্সির কাছে অভিযোগ জানাবেন এবং ফান্ড রিকভার করার জন্য চেষ্টা করতে থাকবেন। ধরে নিলাম, সেই ব্রোকারের লাইসেন্স এবং রেগুলেশন দুইটিই রয়েছে এবং আপনি যেখানে থাকেন সেখানে, ব্রোকার লাইসেন্স এর সাথে ব্যবসা করে আসছে।
এই কারনে, ব্রোকার এর লাইসেন্স এবং রেগুলেশন সম্পর্কে খোঁজ নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এখন, যদিও ব্রোকার চাইলে ব্যবসা বন্ধ করে চলে যেতে পারে, তার মানে এই নয় ব্রোকার আসলেই এই কাজ করবে।
ব্রোকারের যাতে ব্যবসা বন্ধ করতে না হয় তাই ব্রোকার সবসময়ই, নিজ কারনে “দেউলিয়া” হবার এই রিস্ক ম্যানেজ করে থাকে। কিভাবে ব্রোকার নিজেদের এই ধরনের “রিস্কি সিচুয়েশন” থেকে রক্ষা করে এবং কিভাবে ব্রোকার এই রিস্ক ম্যানেজ করে, সে সম্পর্কে পরবর্তী একটি আর্টিকেল বিস্তারিত আপনার সামনে উপস্থাপন করবো।
আশা করি আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে। এই আর্টিকেল সম্পর্কিত বিশেষ কোনও প্রশ্ন থাকলে আমাদের জানাতে পারেন কিংবা নিচে কমেন্ট করতে পারেন। প্রতিদিনের আপডেট ইমেইল এর মাধ্যমে গ্রহনের জন্য, নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করে নিতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো টিউটোরিয়াল দেখার জন্য অনুগ্রহ করে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন। এছাড়াও, যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেইসবুক এবং টেলিগ্রাম চ্যানেলে। এছারাও ট্রেড শিখার জন্য জন্য আমাদের রয়েছে বিশেষায়িত অনলাইন ট্রেনিং পোর্টাল।
Trading cross sikta chai janaben.
কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ। ট্রেনিং কোর্স এর জন্য অনুগ্রহ করে এই লিংক থেকে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন। লিংক – https://fxbd.co/training
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই, আর্টিকেল টি পড়ে অনেক বিষয় জানতে পারলাম,
আরও অজানা কিছু আর্টিকেল নিয়ে আলোচনা করার জন্য অনুরোধ করছি।
মতামত এবং পরামর্শ প্রদানের জন্য ধন্যবাদ। আমরা চেষ্টা করছি নিত্য-নতুন প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে আর্টিকেল হিসাবে উপস্থাপন করার। আশা করছি, আমাদের সাথেই থাকবেন।