ট্রেডিং এর জন্য কারেন্সি নির্বাচন

1
1004
ট্রেডিং এর জন্য কারেন্সি নির্বাচন
সর্বশেষ আপডেট: May 18, 2023
You are here:
প্রত্যাশিত পড়ার সময়: 5 মিনিট

ট্রেডিং এর জন্য কারেন্সি নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া কেননা, ব্রোকারগুলো এতবেশী কারেন্সি পেয়ার ট্রেডিং এর জন্য অফার করে সেগুলো থেকে সঠিক কারেন্সি পেয়ার নির্বাচন করা মোটেও সহজ কাজ নয়। আজকের আর্টিকেলটিতে কিভাবে কারেন্সি পেয়ার নির্বাচন করতে হয় সেটির কিছুটা ধারণা প্রদান করবো।

কারেন্সি পেয়ার পরিচিতি

স্পট ফরেক্স ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে আমরা মূলত বিভিন্ন কারেন্সি পেয়ারেই ট্রেড করে থাকি। যেমন ধরুন, EUR/USD, GBP/USD কিংবা USD/CAD. এছাড়াও প্রায় প্রতিটি ব্রোকারই শ’খানেক কারেন্সি পেয়ারে ট্রেড করার সুবিধা প্রদান করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আপনিও কী এই সকল কারেন্সি পেয়ারেই ট্রেড করবেন?

সহজ উত্তর হচ্ছে, সেটি সম্পূর্ণ আপনার ব্যাপার। আপনি চাইলে সবগুলো কারেন্সি পেয়ারেই ট্রেড করতে পারেন। তবে এতে করে কিছু সমস্যা আছে। সেগুলো নিয়ে একটু পরে আসছি।

ভালো ট্রেড করার জন্য সঠিক কারেন্সি পেয়ার নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া কেননা, আপনি যদি নিজ ট্রেডিং এর জন্য সঠিক কারেন্সি পেয়ার নির্বাচন করতে না পারেন, তাহলে প্রফিট করা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাবে।

ট্রেডিং এর জন্য যত রকমের কারেন্সি পেয়ার বিদ্যমান থাকে সেগুলোকে প্রধানত দুইটি ভাগে বিভক্ত করা যায়।

  1. Major কারেন্সি পেয়ার
  2. Cross কারেন্সি পেয়ার

ক্রস কারেন্সি পেয়ারকে আবার দুইভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে।

  1. Major ক্রস কারেন্সি পেয়ার
  2. Exotic ক্রস কারেন্সি পেয়ার

মেজর কারেন্সি পেয়ার: সর্বমোট ৫টি মেজর কারেন্সি পেয়ার রয়েছে। এই কারেন্সি পেয়ারগুলোটি সবথেকে বেশি পরিমাণ ট্রেড সংঘঠিত হয়ে থাকে। এগুলো হচ্ছে – EUR/USD, GBP/USD, USD/CAD, USD/JPY, USD/CHF এছাড়াও, আরও দুইটি কারেন্সি পেয়ার রয়েছে যেগুলোকে অনেকেই মেজর কারেন্সি পেয়ার হিসাবে মনে করেন। এগুলো হচ্ছে – AUD/USD, NZD/USD. এখন আমাদের তর্কে যাবার কোনো দরকার নেই। আমরা ধরে নিব, মেজর কারেন্সি পেয়ারের সংখ্যা হচ্ছে সর্বমোট ৭টি।

এদের মধ্যে সবথেকে বেশী জনপ্রিয় কারেন্সি পেয়ার হচ্ছে মূলত ৪টি। এগুলো হচ্ছে – EUR/USD, GBP/USD, USD/JPY এবং USD/CHF. অর্থাৎ, এই ৭টি কারেন্সি পেয়ারের মধ্যে এই উল্লেখিত ৪টি কারেন্সিতেই সব থেকে বেশি ট্রেড হয়ে থাকে।

যেমন, প্রতিদিন কারেন্সি পেয়ারগুলোটি যেই পরিমাণ ট্রেড হয় সেগুলোআর ৬০% হয়ে থাকে EUR/USD কারেন্সি পেয়ারেই।

এই ৭টি কারেন্সি পেয়ারের বাইরে যতরকমের কারেন্সি পেয়ার দেখবেন, সবগুলোই হচ্ছে মূলত Cross Currency পেয়ার হিসাবে পরিচিত। ক্রস কারেন্সি সম্পর্কে আমাদের একটি বিশেষ ট্রেনিং কোর্স আছে, আপনি চাইলে কোর্সটিটি অংশ নিতে পারেন। লিংক – https://fxbd.co/cross

এতক্ষণ আমরা কারেন্সি পেয়ারের কিছু ধরন দেখলাম। এখন সময় হয়েছে এদের কিছু বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জেনে নেয়ার।

কারেন্সি পেয়ারের বৈশিষ্ট

মেজর কারেন্সি পেয়ার সমূহ –

বেশী ট্রেডেড কারেন্সি – প্রতিদিন ফরেক্স মার্কেটে যেই পরিমাণ ট্রেড হয় তাদের সিংহভাগই হয় উপরের উল্লেখিত ৭টি মেজর কারেন্সি পেয়ার। দৈনিক ট্রেডিং ভলিউম এর প্রায় ৮০% এই কারেন্সি পেয়ারের দখলে থাকে। এই জন্য এই কারেন্সি পেয়ারগুলোকে ট্রেডিং এর ভাষায় বলা হয় “Most Liquidate Currency”.

অপেক্ষাকৃত কম স্প্রেড – যেহেতু বেশী ট্রেড হয় তাই ব্রোকারগুলো এই কারেন্সি পেয়ারের স্প্রেড কমিয়ে রাখে। এটা ট্রেডারদের জন্য কিছুটা লাভজনক। কেননা, স্প্রেড কম হলে, বোকার আপনাকে চার্জ কম করবে। এতে করে আপনি তুলনামূলক বেশি প্রফিট পাবেন।

ডলারের আধিপত্য – যেহেতু মেজর কারেন্সি পেয়ারের সবগুলোই ডলারের সাথে সংযুক্ত তাই, আপনি যদি ডলার এর মুভমেন্ট সম্পর্কে ভালো করে বুঝতে পারেন, তাহলে এগুলোর যেকোনোটিতেই ভালো এন্ট্রি পজিশন গ্রহণ করতে পারবেন।

মুভমেন্টের সহজীকরণ – USD/JPY এবং USD/CHF কারেন্সি পেয়ার ব্যতীত প্রায় সবগুলোই সাভাবিক মুভমেন্টের মধ্যে বিদ্যমান থাকে। অর্থাৎ, উল্টা-পাল্টা মুভমেন্ট খুব বেশী দেখতে পাবেননা। ফলাফল হিসাবে আকস্মিক লস হবার রেশিও কম থাকবে।

ক্রস কারেন্সি পেয়ার

ট্রেন্ডি কারেন্সি – এই কারেন্সি পেয়ারগুলোর মুভমেন্ট খুব ট্রেন্ডে হয়ে থাকে। অর্থাৎ, যদি কোনোও দিকে প্রাইস মুভ করে তাহলে সেই মুভমেন্ট থেকে বড় আকারের ট্রেন্ড শুরু হবার সম্ভবনা থাকে যা অনেকদিন পর্যন্ত বিদ্যমান থাকে। তাই যদি আপনি একবার শক্তিশালী ট্রেন্ড এর পক্ষে পজিশন গ্রহণ করতে পারেন, তবে ভালো পরিমাণ প্রফিট করতে পারবেন।

ডলার না থাকার সুবিধা – ক্রস কারেন্সিগুলোটি মূলত ডলারের আধিপত্য থাকে না যার কারণে, ডলারের শক্তির সরাসরি প্রভাব এখানে দেখতে পাবেন না। তাই সারাদিন ডলার এর নিউজ খোঁজার থেকে সময় বাঁচবে।

স্প্রেড বেশী – ক্রস কারেন্সিগুলোটি সাধারণত ট্রেডাররা কম ট্রেড করেন বিধায়, প্রতিদিনের হিসাবের এটির ট্রেডিং ভলিউম কম হয়ে থাকে। যার কারণে, বোকার এই ধরনের কারেন্সি পেয়ারের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত স্প্রেড চার্জ করে থাকে যেটা ট্রেডারদের জন্য এক ধরনের লস।

মূলত এইগুলোই হচ্ছে ক্রস এবং মেজর কারেন্সি পেয়ারের মধ্যকার বিশেষ কিছু পার্থক্য। এছাড়াও, আরও অনেক কিছু আছে যা একটি আর্টিকেলে শেষ করা যাবেনা। তাই শুধু ধারণা প্রদান করার জন্যই এতটুকু আলোচনা।

কারেন্সি পেয়ার নির্বাচন

এখন সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ, কারেন্সি পেয়ার নির্বাচন করে নিতে হবে। কেননা, ট্রেডের প্রফিট নির্ভর করবে মূলত ট্রেডিং স্ট্রেটিজি এর উপর। আর ট্রেডিং স্ট্রেটিজি নির্ভর করবে, কারেন্সি পেয়ারের উপর।

একই ধরনের ট্রেডিং কৌশল সকল কারেন্সির জন্য ব্যবহার করলে, প্রফিট করার সম্ভাবনা কমে আসবে। কেননা এক এক ধরনের কারেন্সি পেয়ারের মুভমেন্ট হয়ে থাকে, এক এক রকমের। তাই আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, ট্রেড করার জন্য শুধুমাত্র একটি কিংবা দুইটি নির্দিষ্ট কারেন্সি পেয়ার নির্বাচন করে নিন।

এতে করে আপনার, সময়, প্রফিট করার রেশিও এবং ব্যালেন্স সবগুলোই উপকারে আসবে। এখন চলুন, জেনে নেয়ার চেষ্টা করি, কারেন্সি পেয়ার নির্বাচন করার ক্ষেত্রে কী কী দিক অনুসরণ করতে হবে।

ট্রেডিং এর ধরন নির্বাচন – প্রথমে বুঝতে হবে, আপনি নিজে কোন ধরনের ট্রেডার। যেমন ধরুন, কেউ আছে অল্প সময়ের জন্য ট্রেড করেন এবং বেশি বেশি ট্রেড করেন। আবার কেউ আছেন, যিনি প্রতিদিনের এন্ট্রি দিনেই ক্লোজ করে ফেলেন। অর্থাৎ, প্রফিট কিংবা লস যেটাই হোক না কেন, দিন শেষে এন্ট্রি ওপেন রাখা যাবেনা। আপনাকে বুঝতে হবে, আপনি নিজে কোন ধরনের ট্রেড করতে পচ্ছন করেন। সেই হিসাবে কারেন্সি পেয়ার নির্বাচন করে নিতে হবে।

প্রাইস মুভমেন্ট বিশ্লেষণ – ধরুন আপনি কিছুটা ধীরে-সুস্থে ট্রেড করতে পছন্দ করেন। অর্থাৎ, তাৎক্ষণিক প্রাইসের বড় আকারের মুভমেন্ট আপনার পছন্দ নয়। তাই আপনাকে এমন কারেন্সি পেয়ার নির্বাচন করে নিতে হবে, জেটির মুভমেন্ট সাভাবিক ধরনের। অন্যদিকে, আরও পছন্দ T20 খেলা। তিনি সেই হিসাবে কারেন্সি পেয়ার নির্বাচন করবেন যেটির সামগ্রিক মুভমেন্টের পরিমাণ বেশী।

ট্রেডিং এর সময় নির্বাচন – সব কারেন্সি, সারাদিনই মুভমেন্ট প্রদান করেনা। কারেন্সি, মুলত সে দেশের ট্রেডিং টাইম (স্টক মার্কেট) এর হিসাবে মুভমেন্ট প্রদান করে থাকে। তাই, আপনি দিনের কোন সময়ে ভালো ট্রেড করতে পারবেন সেটি নির্ধারণ করে নিন। এবং বের করার চেষ্টা করুন, সে সময়ে কোন কারেন্সির মুভমেন্ট বেশী থাকে।

এগুলো ভাল করে যাচাই-বাছাই করলে, আপনি কারেন্সি পেয়ার নির্বাচন করে নিতে পারবেন। তারপরও আপনার সুবিধার জন্য আমাদের ট্রেডিং অভিজ্ঞতার আলোকে বিশেষ কয়েকটি কারেন্সি পেয়ারের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করছি।

EUR/USD – নতুনদের জন্য এক কথায় আদর্শ। স্বাভাবিক মুভমেন্ট প্রদান করে এবং বড় আকারের এলো-মেলো মুভমেন্ট দেখতে পাওয়া যায়না। যাদের ব্যালেন্স কম এবং ট্রেডিং এর দুনিয়ায় নতুন, তাদের জন্য এই কারেন্সি পেয়ারটি রিকমান্ডেড।

GBP/USD – এটি কিছুটা শক্তিশালী মুভমেন্ট প্রদান করতে সক্ষম। অর্থাৎ, দিনে প্রায় ২০০-২৫০ পিপ্স পর্যন্ত মুভমেন্ট প্রদান করে। যারা মুলত ট্রেডিং এর বড় মুভমেন্টের সাথে মানিয়ে নিতে পারবেন এবং একই সাথে প্রফিট/লসও দ্রুত গতির প্রত্যাশা করেন, তাদের জন্য এই কারেন্সি পেয়ার।

USD/CAD – মুভমেন্ট সবসময় বিদ্যমান থাকেনা। তবে এই মুভমেন্ট ট্রেন্ডের দিকেই বেশী অবস্থান করে। সে হিসাবে যারা বড় অর্থাৎ, সুইং কিংবা পজিশন ট্রেডিং করতে চান তারা চাইলে এই কারেন্সি পেয়ারটি বেছে নিতে পারেন।

NZD/USD – EUR/USD কারেন্সি পেয়ারটির মতন এটিও স্বাভাবিক মুভমেন্ট প্রদান করে। অর্থাৎ, হটাত করে বড় আকারের কোন স্পাইক খুব বেশী একটা দেখা যায়না। তবে সমস্যা হচ্ছে, NZD এর স্টক মার্কেটের লেনদেন হয় মুলত বাংলাদেশ সময় রাত ৩ টার দিকে। তখন যদি ট্রেড করার জন্য সময় দিতে পারেন, তাহলে আপনার জন্য ঠিক আছে।

USD/JPY এবং USD/CHF – মনে রাখবেন, সকল “JPY” এবং সকল “CHF” কারেন্সি পেয়ারগুলোর মুভমেন্ট, অস্বাভাবিক ধরনের হয়ে থাকে। এছাড়াও, “Overnight Fluctuations” এর সংকাও খুব বেশী থাকে। তাই নতুন এবং ব্যালেন্স যাদের কম, তাদের জন্য এই কারেন্সি পেয়ার দুইটি রিকমান্ডেড নয়।

AUD/USD – এই কারেন্সি পেয়ারটির মুভমেন্টও স্বাভাবিক মানের হয়ে থাকে। তবে একটি সমস্যা হচ্ছে, AUD এর প্রাইস – GOLD এর শক্তির সাথে যুক্ত। অর্থাৎ, গোল্ড এর প্রাইস যদি বৃদ্ধি পেতে থাকে, তাহলে AUD এর শক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে। অন্যদিকে, গোল্ড এর প্রাইস হ্রাস পেলে – AUD এর শক্তিও কমতে থাকে। যদি এই কারেন্সিটি আপনি ট্রেডিং এর জন্য নির্বাচন করেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে GOLD কিংবা XAU/USD এর প্রাইস চার্টও বিশ্লেষণ করতে হবে।

এখন ট্রেডিং এর জন্য কোন কারেন্সি পেয়ার নির্বাচন করবেন, সেটি সম্পূর্ণ আপদার নিজস্ব ব্যাপার। তবে মনে রাখবেন, আপনার ট্রেডিং স্টাইল, কৌশলের সাথে মিলে – চেষ্টা করবেন এমন কারেন্সি পেয়ারে ট্রেড করার জন্য। এতে করে ট্রেডিং এর জন্য স্ট্রেটিজি সেট করতেও আপনার সুবিধা হবে।


আশা করি আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে। এই আর্টিকেল সম্পর্কিত বিশেষ কোনও প্রশ্ন থাকলে আমাদের জানাতে পারেন কিংবা নিচে কমেন্ট করতে পারেন। প্রতিদিনের আপডেট ইমেইল এর মাধ্যমে গ্রহনের জন্য, নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করে নিতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো টিউটোরিয়াল দেখার জন্য অনুগ্রহ করে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন। এছাড়াও, যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেইসবুক এবং টেলিগ্রাম চ্যানেলে। এছারাও ট্রেড শিখার জন্য জন্য আমাদের রয়েছে বিশেষায়িত অনলাইন ট্রেনিং পোর্টাল।

কপি করুন আমাদের এক্সপার্টদের ট্রেড। জানুন বিস্তারিত

আরটিকেল সম্পর্কে মতামত
খারাপ 0 47 of 47 found this article helpful.
Views: 1058

1 COMMENT

  1. এক কথায় চমৎকার হয়েছে আপনাদের সামগ্রিক হেল্প ফুল তথ্য নির্ভর আলোচনা।

কমেন্ট/প্রশ্ন করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here