রিয়েল ট্রেডিং এর জন্য করণীয় কিছু বিষয় সম্পর্কে আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো। সম্পূর্ণ নতুন অবস্থায় যখন আমরা ডেমো কিংবা প্র্যাকটিস ট্রেডিং থেকে রিয়েল ট্রেডিং শুরু করতে যাই তখন এই বিষয়গুলো অবশ্যই মেনে চলার চেষ্টা করবেন অন্যথায় ট্রেডিং, আপনার জন্য প্রফিটেবল নাও হতে পারে। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনার ভালো লাগবে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
বিনিয়োগের ক্যালকুলেশন
To topবিনিয়োগ হচ্ছে, যেই পরিমান অর্থ আপনি প্রাথমিক অবস্থায় ফরেক্স ট্রেডিং অ্যাকাউন্টে ডিপোজিট করবেন সেটিকে বোঝায়। ট্রেডার হিসাবে এক এক জনের বিনিয়োগের পরিমান এক এক রকমের হবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে বিনিয়োগের উপর ক্যালকুলেশন, আপনাকে একই প্রক্রিয়ায় করতে হবে। চিন্তা করার কিছু নেই। পরিষ্কার করে বুঝিয়ে বলছি।
ধরুন আপনি নির্ধারণ করলেন, প্রাথমিক অবস্থায় সর্বাধিক ১০০ ডলার পরিমান ডিপোজিট করে রিয়েল ট্রেডিং শুরু করবেন। এখন যেহেতু আপনি ব্যবসা শুরু করার চিন্তা করছেন, তাই এখন আপনাকে এই ব্যবসা থেকে সম্ভাব্য (ভবিষ্যৎ) প্রফিট এবং লসের একটি হিসাব করে নিতে হবে।
অনেকটা এই রকমের, কত বিনিয়োগ করলে কত পরিমান রিটার্ন পাওয়া যায়। একইভাবে চিন্তা করতে হবে লস হলে, ঠিক কি পরিমান লস আপনার জন্য ক্ষতির কারন হবেনা।
ফরেক্স ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে প্রফিট করার অপশন থাকে unlimited অর্থাৎ, কি পরিমান প্রফিট হবে সেটির কোনও নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতা নেই। সীমাবদ্ধতা হচ্ছে শুধুমাত্র লসের ক্ষেত্রে। যেমন ধরুন, আপনি ভালো ট্রেড করতে পারলে, ১০০ ডলারকে ১০০০ কিংবা ১০,০০০ ডলারেও রূপান্তর করতে পারবেন। কিন্তু যদি লস করেন তাহলে আপনার বিনিয়োগের, ১০০ ডলারই লস হবে।
যেহেতু আমাদের টার্গেট হচ্ছে, দীর্ঘ সময়ের জন্য ট্রেডিং অ্যাকাউন্টকে টিকিয়ে রাখতে হবে তাই আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে কোনও কারনেই যাতে করে নিজের ট্রেডিং ব্যালেন্সটি স্টপ-আউট না হয়ে যায়। সে জন্য আমাদের সবসময় লসের বিবেচনায় ট্রেডিং অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগকৃত অর্থের, সঠিক ক্যাল্কুলেশন করে নিতে হবে।
প্রশ্ন হতে পারে, কেন ১৫% এর কথা আমরা বলছি? ধরুন, আপনি ১০০ ডলার ট্রেড করার জন্য ডিপোজিট করলেন। কোনও এন্ট্রিতে আপনি ১৫ ডলার পরিমান লস করলেন এবং এন্ট্রিটি লসে ক্লোজ করে দিলেন। তাহলে এখন আপনার ব্যালেন্সের পরিমান হবে ১০০-১৫ = ৮৫ ডলার।
কারেন্সি পেয়ার নির্বাচন
To topদক্ষ ফরেক্স ট্রেডাররা কখনোই একসাথে একাধিক কারেন্সি পেয়ারে ট্রেড করেন না। নতুন অবস্থায় আমরা সবাই এক সাথে একাধিক কারেন্সিতে এন্ট্রি নেয়ার চেষ্টা করে থাকি। নতুন অবস্থায় সবারই এটি হয়। কিন্তু এটি ভালো কোনও প্র্যাকটিস নয়।
কেননা, আপনি যখন একাধিক কারেন্সি পেয়ারে এন্ট্রি গ্রহন কবেন, যদি সেই এন্ট্রিগুলো লসে থাকে তাহলে ট্রেডিং অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্সকে টিকিয়ে রাখার আপনার জন্য কষ্টকর হয়ে যাবে। এছাড়াও, ভালো মানের এন্ট্রি গ্রহন করার জন্য আপনাকে মার্কেট বিশ্লেষণ করতে অনেক বেশী সময় প্রদান করতে হয়। এখন যদি আপনি একাধিক কারেন্সি পেয়ারে এন্ট্রি গ্রহন করেন তাহলে আপনাকে একাধিক মার্কেট বিশ্লেষণ করতে হবে। এতে করে ভাল কিছুই হবে না উল্টো সব হয় যাবে “জগা-খিচুড়ির” মতন অবস্থায়।
একটি নির্দিষ্ট কারেন্সি পেয়ারে ট্রেড করতে হবে। একাধিক কারেন্সি পেয়ারে এন্ট্রি নেয়া যাবে না। অর্থাৎ, আপনি যদি EUR/USD তে ট্রেড করতে পছন্দ করেন তাহলে শুধুমাত্র এই কারেন্সি পেয়ারেই ট্রেড অব্যাহত রাখতে হবে। এছাড়াও, একটি ট্রেডিং অ্যাকাউন্টে একাধিক পেয়ারে এন্ট্রি গ্রহন করলে, যদি এন্ট্রিগুলো লসে থাকে সেই অ্যাকাউন্টকে টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হয়ে পরে।
লট সাইজ নির্ধারণ
To topব্যালেন্স এর উপর নির্ভর করে লট সাইজ নির্ধারণ, সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সবথেকে বেশী অ্যাকাউন্ট তাদেরই স্টপআউট হয়, যারা কোনও ধরনের রিস্ক-ম্যানেজমেন্ট ছাড়াই বড় লট কিংবা ভলিউম এর ট্রেড করে থাকেন। এই বিষয়ে আপনাকে অবশ্যই ক্যালকুলেটিভ হতে হবে।
যেমন ধরুন, ব্যালেন্সের উপর সর্বাধিক ১৫% লসের হিসাবে আপনি যদি ১০০ ডলার ডিপোজিট করেন আপনাকে ক্যালকুলেট করে বের করে নিতে হবে এই পরিমান লস রাখার জন্য কি পরিমান লট কিংবা ভলিউমের এন্ট্রি গ্রহন করবেন।
ক্যালকুলেশন করবেন অনেকটা এই রকমেরঃ প্রতিটি এন্ট্রি জন্য এভারেজ ৫০ পিপ্স এর স্টপলস সেট করে নিবেন। সেই হিসাবে আপনি যদি ০.০১ লটে কোনও এন্ট্রি নেন তাহলে ৫০ পিপ্স লসের জন্য আপনাকে ৫ ডলার পরিমান লস ক্যারি করতে হবে। লট সাইজ যদি ০.০২ হয় তাহলে লসের পরিমান হবে ১০ ডলার, ০.০৩ এর জন্য লস হবে ১৫ ডলার। এভাবে লট সাইজ বৃদ্ধির সাথে সাথে লসের পরিমানও বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, প্রটি ১০০ ডলার ডিপোজিটে আপনার লট সাইজের পরিমান হবে সর্বাধিক ০.০১। এই হিসাবে আপনি যেই পরিমান ফান্ড ডিপোজিট করবেন আপনার লট সাইজ হবে সেটির 0.১% মাত্র। এর থেকে বেশী ভলিউমের লটে ট্রেড করলে অ্যাকাউন্ট স্টপআউট হবার সম্ভাবনা অনেক বেশী থাকে।
সঠিক কৌশল নির্ধারণ
To topট্রেডিং এর সফলতা নির্ভর করবে, আপনি কি কৌশল ব্যবহার করে ট্রেড করছেন সেটির উপর। যদি আপনার ট্রেডিং কৌশল ভালো না হয় তাহলে প্রফিট করাও সম্ভব নয়। সঠিক কৌশল নির্ধারণ করার জন্য প্রচুর প্র্যাকটিস এবং ধৈর্য নিয়ে সেটিকে ট্রেডে ব্যবহার করুন এবং দিন শেষে হিসাব করে দেখুন, যেই কৌশল ব্যবহার করে ট্রেড করছেন সেটি কাজ করছে কিনা।
যদি দেখেন, যেই কৌশল ব্যবহার করছেন সেটি আপনাকে প্রফিট এনে দিতে সক্ষম হচ্ছে না, তাহলে এবার চিন্তা করতে হবে কৌশল পরিবর্তন করার। এনালাইসিস করে দেখুন, কোথায় ভুল হচ্ছে, কেন লস হচ্ছে, কি সমস্যা হচ্ছে এগুলো খুজে বের করুন এবং কৌশল আপডেট করুন নতুবা নিজের জন্য নতুন করে কৌশল নির্ধারণ করার চেষ্টা করুন।
সঠিক কৌশল নির্ধারণে জ্ঞানের কোনও বিকল্প নেই। আপ্নার অভিজ্ঞতা যত বাড়বে আপনি ততবেশী অভিজ্ঞতার সাথে ট্রেড করতে পারবেন। জ্ঞান বৃদ্ধি করার জন্য আমাদের রয়েছে অনলাইন ট্রেনিং এর ব্যবস্থা। এই সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন এই লিংক থেকে – https://fxbd.co/training
অ্যাকাউন্ট মনিটরিং
To topপ্রতিদিন কিংবা সপ্তাহে কিংবা মাস জুড়ে কি পরিমান ট্রেড করছেন, সেটির মধ্যে কতগুলো প্রফিট হল কিংবা কি পরিমান লস করলেন, নেট প্রফিট নাকি লস, প্রফিট হলে ব্যালেন্সের রেশিও হিসাবে কত % প্রফিট করলেন কিংবা লস করলেন, সেটির অবশ্যই হিসাব রাখবেন।
এতে করে আপনি বুঝতে পারবেন, আপনি যেই পথে ট্রেড করছেন সেটি আপনার জন্য ভালো হচ্ছে নাকি খারাপ। গত কয়েকবছর ধরে নিয়মিত আমরা নিজেদের ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট নিয়মিত মনিটর করে আসছি। এছাড়াও, আমরা একটি মাইলস্টোন অর্থাৎ, প্রতিমাসের একটি ট্রেডিং টার্গেট নির্ধারণ করে রেখেছি।
এই মনিটরিং এর মাধ্যমে প্রতি মাস শেষ আমরা কি পরিমান প্রফিট কিংবা লস করতে সক্ষম হয়েছি এবং আমাদের টার্গেট হিসাবে, উপার্জন কি পরিমানে হয়েছে সেটি সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত তথ্য জানতে পারি।
এই ড্যাটা, তখন আমাদের এন্ট্রি গ্রহন, পজিশন ক্লোজিং করতে অনেকবেশী সহায়তা করে থাকে। আমরা দুইভাবে অ্যাকাউন্ট মনিটর করে থাকি।
- অনলাইন মনিটরিং
- অফলাইন মনিটরিং
এই দুইটি পদ্ধতির মধ্যে আমাদের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে অফলাইন মনিটরিং মেথড। এর জন্য আমরা একটি এক্সেল শিট এর মধ্যে প্রতিদিনের এন্ট্রিগুলোর আপডেট সংরক্ষন করে থাকি। আপনি চাইলে এই লিংক ক্লিক করে আমাদের মনিটরিং ফাইলটি নিজের জন্য ডাউনলোড করে নিতে পারেন। এরপর নিজের ট্রেডিং এর সকল তথ্য চাইলে সংরক্ষন করতে পারেন। ফাইল লিংক – https://fxbd.co/xlsx
এই ফাইলটি ব্যবহার করার মাধ্যমে, আমরা একই সাথে দিনের, সপ্তাহের এবং মাসের ভিত্তিতে প্রফিট এবং লসের হিসাব করে রাখতে পারি। যার ফলে এটি আমাদের টার্গেট সেট করতে সহায়তা করে।
নিয়মিত ফান্ড উত্তলন
To topসবসময় ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট থেকে নিয়মিত প্রফিটের এমাউন্ট উত্তলন করে ফেলবেন কিংবা সেই পরিমান অর্থ অন্যত্র সরিয়ে রাখবেন। কেননা ট্রেডার হিসাবে আপনার প্রথম করনীয় হচ্ছে, ডিপোজিটকৃত এমাউন্ট সবার আগে উত্তলন করে ফেলা।
এতে করে যদি পরবর্তীতে লসও করেন, তাহলেও আপনার বিনিয়োগের উপর ঝুঁকি থাকবে না। যেমন ধরুন, যদি ১০০ ডলার ডিপোজিট করে ট্রেড শুরু করি, তাহলে যা প্রফিট করবো সেটিই উত্তলন করে ফেলবো। এতে করে একসময় দেখা যাবে, আপনার বিনিয়োগ করা সম্পূর্ণ অর্থই তুলে ফেলছেন। যা ট্রেডিং অ্যাকাউন্টে অবশিষ্ট থাকবে, সেটি হচ্ছে আপনার প্রফিটেবল এমাউন্ট।
এখন, যদি কারনে এই প্রফিট লস করে ফেলেন, কমপক্ষে আপনার নিজের কোনও ক্ষতি হবেনা কেননা আপনি ইতিমধ্যেই বিনিয়গের অর্থ সম্পূর্ণরূপে তুলে ফেলছেন। অর্থাৎ, যা লস সেটি প্রফিট থেকেই হবে।
কেননা, ট্রেডে বিনিয়োগের পর থেকে আমাদের ১ম টার্গেট হচ্ছে বিনিয়োগের এমাউন্টকে উত্তোলন করে ফেলা। আর সেটি প্রফিট থেকেই সম্ভব। তাই নিজেদের ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট বড় করার চেষ্টা না করে, ধীরে ধীরে প্রফিটকৃত অর্থ উত্তোলন করে নিতে হবে।
এতে করে আপনার বিনিয়োগ লস হবার শঙ্কা কমে আসবে এবং যদি কোনও কারনে লস হয়েও থাকে তারপর সেটি আপনার জন্য লসের কারন হবেনা, কেননা সেই লস তখন হবে প্রফিটের পরিমান থেকে।
নির্দিষ্ট কিছু ট্রেড থেকে বিরত থাকা
To topট্রেড করার জন্য অবশ্যই আপনাকে সঠিক কারেন্সি পেয়ার নির্বাচন করে নিতে হবে। এই নির্বাচন মুলত দুইটি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল।
১. আপনার বিনিয়োগের পরিমানের উপর
২. মুভমেন্টের উপর
এছাড়াও, ক্রস কারেন্সিগুলোতেও চেষ্টা করবেন কম ট্রেড করার জন্য। কেননা এই কারেন্সিগুলোর মুভমেন্ট থাকে অস্বাভাবিক, যা আপনার জন্য বড় আকারের লসের কারন হতে পারে।
আপনি সবসময় চেষ্টা করবেন, ট্রেড করার জন্য একটি নির্দিষ্ট মেজর কারেন্সি পেয়ার যেমন, EUR/USD, GBP/USD, USD/CAD, NZD/USD, AUD/USD এই পেয়ারগুলোর মধ্যে থেকে একটি কারেন্সি নির্দিষ্ট করে ট্রেড করার।
বেশী মুভমেন্টের কারেন্সি পেয়ারঃ GBP/JPY, USD/JPY, USD/CHF, সকল JPY এবং CHF কারেন্সি পেয়ারগুলোতে প্রাইসের মুভমেন্ট অপেক্ষাকৃত অনেকবেশী থাকে। যাদের ট্রেডিং অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্সের পরিমান কম, তারা এই ধরনের কারেন্সি পেয়ারে ট্রেড করা থেকে বিরত থাকবেন।
মনে রাখবেন, কারেন্সি পেয়ারের মুভমেন্ট বেশী থাকার অর্থ হচ্ছে, প্রফিটের রেশিও যেমন বেশী হবার সম্ভাবনা থাকবে, ঠিক একই রকমভাবে লস হবার সম্ভাবনাও থাকবে অনেক বেশী।
অপেক্ষাকৃত কম মুভমেন্টের পেয়ারঃ EUR/USD, USD/CAD, AUD/USD. NZD/USD,
আশা করি আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে। এই আর্টিকেল সম্পর্কিত বিশেষ কোনও প্রশ্ন থাকলে আমাদের জানাতে পারেন কিংবা নিচে কমেন্ট করতে পারেন। প্রতিদিনের আপডেট ইমেইল এর মাধ্যমে গ্রহনের জন্য, নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করে নিতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো টিউটোরিয়াল দেখার জন্য অনুগ্রহ করে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন। এছাড়াও, যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেইসবুক এবং টেলিগ্রাম চ্যানেলে। এছারাও ট্রেড শিখার জন্য জন্য আমাদের রয়েছে বিশেষায়িত অনলাইন ট্রেনিং পোর্টাল।