Forex Channel – আমরা সর্বদাই পরামর্শ প্রদান করি, ট্রেডে এন্ট্রি গ্রহন করার জন্য সবসময়ই সাপোর্ট এবং রেসিস্টেন্স লেভেলগুলো খুঁজে তারপর এন্ট্রি গ্রহন করবেন। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা, প্রায় ৯০ শতাংশ সময়েই প্রাইস, এই লেভেলগুলোতেই বিদ্যমান থাকে। সুতরাং, আপনি যদি লেভেলগুলো চিহ্নিত করে তারপর এন্ট্রি গ্রহন করতে পারেন, তাহলে ভুল এন্ট্রি থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারবেন এবং একই সাথে লসের পরিমাণও অনেক কম হবে।
ইতিমধ্যেই বেশকিছু ধরনের টেকনিক্যাল টুল যেমন, ট্রেন্ডলাইন, পিভট পয়েন্ট, চার্ট প্যাটার্ন, ফিবনাচি ইত্যাদি বিষয়গুলোর সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি। আজকের আর্টিকেলে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং জনপ্রিয় টেকনিক্যাল টুল হিসাবে Channel এর সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিব। যদি মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটির বিস্তারিত পড়েন তাহলে চ্যানেল টুলটি সম্পর্কে আপনি সবকিছুই বুঝতে পারবেন।
চ্যানেল পরিচিতি
শুরুতেই বলেছি, ট্রেডিং এর জন্য ব্যবহৃত টেকনিক্যাল টুল গুলোর মধ্যে জনপ্রিয় একটি টুল হচ্ছে এই Channel. চ্যানেল, চার্টে চিহ্নিত করা খুবই সহজ এবং খুব সহজেই এটি আপনাকে প্রাইস ট্রেন্ডের নির্দেশ করবে। যার ফলে সহজেই আপনি মার্কেট ট্রেন্ড বুঝতে পারবেন। ফলশ্রুতিতে ভালো এন্ট্রিও গ্রহন করতে পারবেন।
ট্রেন্ডলাইন সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই জানেন। যদি ট্রেন্ডলাইন থিওরিকে আর একটু এগিয়ে নিয়ে যাই এবং একটি সমান্তরাল (parallel) লাইন অংকন করি তাহলেই চ্যানেল হয়ে যাবে। অর্থাৎ, ট্রেন্ডলাইন যেভাবে অংকন করতে হয় ঠিক একই রকম করে চ্যানেলও অংকন করতে হয়।
ট্রেন্ডলাইনের সাথে চ্যানেলের পার্থক্য হচ্ছে, ট্রেন্ডলাইন অংকন করার সময় একটি লাইনে ক্যান্ডেলের লেভেলগুলো যুক্ত করা হয়। অন্যদিকে, চ্যানেলের মাধ্যমে, ক্যান্ডেলের দুইটি লেভেলই (উপর এবং নিচ) দুইটি “সমান্তরাল” লাইনে যুক্ত থাকে। এখানে ভালো করে লক্ষ্য করুন, চ্যানেলে বিদ্যমান লাইন দুইটিকে অবশ্যই “সমান্তরাল” হতে হবে। অর্থাৎ, আপনি নিজ ইচ্ছামতন দুইটি লাইন আঁকতে পারবেন না। আপনি একটি লাইন নিজে আকবেন, অন্য লাইনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেট হয়ে যাবে।
নিচের চিত্রটিতে আমরা চ্যানেলের একটি উধাহরন দিয়েছি।
চিত্রটিতে ভালো করে লক্ষ্য করুন, তাহলে দেখতে পাবেন, দুইটি লাইন পরস্পর সমান্তরাল পজিশনে অবস্থান করছে। যেটির মধ্যে মুলত কারেন্সি পেয়ারের প্রাইস বিদ্যমান রয়েছে।
প্রকারভেদ
ফরেক্স চার্টে তিন ধরনের চ্যানেল পাওয়া যায়ঃ
১. আপ চ্যানেল – Ascending channel (higher highs and higher lows)
২. ডাউন চ্যানেল – Descending channel (lower highs and lower lows)
৩. সমতল চ্যানেল – Horizontal channel (ranging)
আপ চ্যানেল: এটি মুলত আপট্রেন্ডের নির্দেশনা প্রদান করে থাকে। আমরা সবাই জানি, একটি ক্যান্ডেলের মুল দুইটি অংশ থাকে, একটি হচ্ছে হাই লেভেল এবং অন্যটি হচ্ছে লো লেভেলে। যখন প্রাইস ক্রমশ হাইয়ার হাই এবং হাইয়ার লো ফরমেশন তৈরি করতে নিচের থেকে উপরের দিকে উঠে আসতে থাকে তখন যেই চ্যানেলটি পাওয়া যায়, সেটি হচ্ছে আপ চ্যানেল কিংবা ঊর্ধ্বমুখী চ্যানেল কিংবা Ascending Channel.
ডাউন চ্যানেল: এটি মুলত ডাউনট্রেন্ডের নির্দেশনা প্রদান করে থাকে। আমরা সবাই জানি, একটি ক্যান্ডেলের মুল দুইটি অংশ থাকে, একটি হচ্ছে হাই লেভেল এবং অন্যটি হচ্ছে লো লেভেলে। যখন প্রাইস ক্রমশ লোয়ার হাই হাই এবং লোয়ার লো ফরমেশন তৈরি করতে করতে উপর থেকে নিচের দিকে নেমে আসতে থাকে তখন যেই চ্যানেলটি পাওয়া যায়, সেটি হচ্ছে ডাউন চ্যানেল কিংবা নিম্নমুখী চ্যানেল কিংবা Descending Channel.
সমতল চ্যানেল: এই ধরনের পরিস্থিতিতে প্রাইস, নির্দিষ্ট কোনও ট্রেন্ডে বিদ্যমান থাকে না। বরং, প্রাইস একটি নির্দিষ্ট প্রাইস রেঞ্জের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে থাকে। অর্থাৎ, প্রাইস উপরে যাবেনা এবং নিচেও নেমে আসতে পারবেনা। তখন যেই চ্যানেলটি পাওয়া যায় সেটি হচ্ছে, সমতল কিংবা রেঞ্জিং কিংবা নিউট্রাইল কিংবা Horizontal channel.
নিচের চিত্রটি যদি ভালো করে লক্ষ্য করেন, তাহলে এই তিন ধরনের চ্যানেল সম্পর্কে ধারনা পাবেন।
অংকন করার নিয়ম
ফরেক্স ট্রেডের অন্যান্য টেকনিক্যাল এনালাইসিসের মতই Forex Channel, একটি ভালো বাই (buy) অথবা সেল (sell) এর এন্ট্রি নির্দেশ করে থাকে। চ্যানেলের বোটম এবং টপ একটি নির্দিষ্ট এরিয়ার সাপোর্ট এবং রেসিস্টেন্স কে নির্দেশ করে থাকে।
একটি আপ চ্যানেল (ascending) আঁকার জন্য, আপট্রেন্ডের দিকে একটি সমান্তরাল লাইন আঁকুন এবং লাইনটি সরিয়ে যেখানে সবচেয়ে বেশী বিন্দু টাচ করে সেখানে পজিশন করুন।
একটি ডাউন চ্যানেল (descending) আঁকার জন্য, ডাউনট্রেন্ডের দিকে একটি সমান্তরাল লাইন আঁকুন এবং লাইনটি সরিয়ে যেখানে সবচেয়ে বেশী বিন্দু টাচ করে সেখানে পজিশন করুন।
যখন প্রাইস, বোটম ট্রেন্ডলাইনকে স্পর্শ করবে, তখন এটি একটি বাই (buy) এন্ট্রি নির্দেশ করবে। যখন প্রাইস, টপ ট্রেন্ডলাইনকে স্পর্শ করবে, তখন এটি একটি সেল (sell) এন্ট্রি নির্দেশ করবে,
গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাঃ
- যখন আপনি কোনও চ্যানেল অংকন করার চেষ্টা করবেন, দুইটি ট্রেন্ডলাইনকে পরস্পর সমান্তরাল হতে হবে।
- সাধারণত, বোটম চ্যানেল বাই (buy) এবং টপ চ্যানেল (sell) জোন নির্দেশ করে।
- জোড় করে কোনও চ্যানেল আঁকতে যাবেন না। যদি আপনি জোড় করে কোনও চ্যানেল আঁকার চেষ্টা করেন তাহলে সেটা সঠিক নাও হতে পারে এবং এটি আপনার জন্য একটি লসের কারণও হতে পারে।
- চ্যানেল কনফার্ম হবার জন্য কমপক্ষে তিনটি টাচ পয়েন্ট কিংবা ক্যান্ডেলের জোন স্পর্শ করা আবশ্যিক। যদি দেখেন, আপনার অংকিত চ্যানেল লাইনের মধ্যে প্রাইসের তিনটি টাচ পয়েন্ট নেই তাহলে বুঝবেন চ্যানেল এর শক্তি অনেক কম।
- প্রাইস যতবার চ্যানেলের লাইন দুইটি স্পর্শ করবে, ততবেশী শক্তিশালী হয়ে পুনরায় চ্যানেল রেঞ্জের মধ্যে বাউন্স করবে। যদি দেখেন, প্রাইস একাধিকবার চ্যানেল রেঞ্জ স্পর্শ করেও ব্রেক করতে পারছে না তাহলে বুঝবেন চ্যানেল এর রেঞ্জটি অনেকবেশী শক্তিশালী।
- যদি দেখেন, প্রাইস ইতিমধ্যেই ৫/৬ বার চ্যানেলের লেভেলগুলো স্পর্শ করে ফেলেছে কিন্তু তবুও রেঞ্জ ব্রেক করতে পারেনি, তখন আর বাউন্স ট্রেডিং কৌশল ব্যবহার করে এন্ট্রি গ্রহন করবেন না। কেননা, ৫/৬ বার স্পর্শ করার পর, খুববেশী সম্ভাবনা থাকে রেঞ্জ ব্রেকআউট করার। তখন ব্রেকআউট কৌশল অবলম্বন করে এন্ট্রির জন্য অপেক্ষা করতে থাকবেন।
- চ্যানেল ব্রেকআউট হয়ে গেলে, ব্রেকআউট হিসাবে প্রাইসের টার্গেট মুভমেন্ট হবে, চ্যানেলের রেঞ্জ অনুসারে। যেমন ধরুন, চ্যানেলের মদে বিদ্যমান লাইন দুইটির দুরত্ত যদি হয় ১০০ পিপ্স, তাহলে ধরে নিবেন, ব্রেকআউট হবার পর, প্রাইসের সম্ভাব্য মুভমেন্ট হবে ১০০ পিপ্স এর কাছাকাছি।
- টাইমফ্রেম যত বড় হবে, চ্যানেলের সিগন্যালও ততবেশি শক্তিশালী হবে। যদি অপেক্ষাকৃত ছোট টাইমফ্রেম যেমন, ১৫ মিনিট কিংবা ৩০ মিনিটের টাইমফ্রেমের চার্টে চ্যানেল খুঁজে পান, তাহলে সেটির স্থায়িত্ব হবে দুর্বল। অন্যদিকে, যদি H4 কিংবা Daily টাইমফ্রেমের চার্টে চ্যানেল খুঁজে পান, তাহলে সেই সিগন্যাল এর স্থায়িত্ত হবে অনেক বেশী।
- আপনার মতন আরও লক্ষাধিক ট্রেডার যেহেতু চার্টে এই চ্যানেল রেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে ট্রেড করার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, তাই চ্যানেল রেঞ্জের কাছাকাছি অবস্থানে এসে প্রাইসের অস্বাভাবিক মুভমেন্ট লক্ষ্য করা যায়। তখন ফেইকআউট হবার সম্ভাবনাও থাকে অনেকবেশী। এই ধরনের ফেইকআউট থেকে বাচার জন্য অনুগ্রহ করে “False Breakout” আর্টিকেলটি পড়ে নিতে পারেন।
ট্রেডিং পদ্ধতি
বাউন্স ট্রেডিং কৌশল
চ্যানেলের মাধ্যমে ট্রেডিং পদ্ধতি খুবই সহজ। যেহেতু এই পদ্ধতিতে প্রাইস, চ্যানেলের দুইটি সমান্তরাল লাইনের মধ্যেই অবস্থান করতে থাকে তাই আদর্শ হচ্ছে, বাউন্স ট্রেডিং কৌশল অনুসরণ করে ট্রেড করা। অর্থাৎ,
- প্রাইস যখন চ্যানেলের উপরের লাইন অর্থাৎ, রেসিস্টেন্স লেভেলের কাছে অবস্থান করবে তখন Sell এন্ট্রি গ্রহন করা
- প্রাইস যখন চ্যানেলের নিচের লাইন অর্থাৎ, সাপোর্ট লেভেলের কাছে অবস্থান করবে তখন Buy এন্ট্রি গ্রহন করা যেতে পারে।
যেহেতু বেশীরভাগ সময়ই প্রাইস, চ্যানেল রেঞ্জের মধ্যে অবস্থান করে মুভ করতে থাকে, তাই এই ধরনের ট্রেডিং কৌশল খুবই কার্যকরী এবং নিরাপদ হিসাবে গন্য হতে পারে। এছাড়াও, যেহেতু চ্যানেল লাইনের একদম কাছেই রিভার্স এন্ট্রি গ্রহন করবো ফলে প্রাইস যদি কোনওভাবে ব্রেকআউট করতেও সক্ষম হয় তাহলেও আমাদের লসের পরিমাণ হবে অনেক কম।
ব্রেকআউট ট্রেডিং কৌশল
এই কৌশল অনুসরণ করে, প্রাইস যখন চ্যানেলের রেঞ্জ সফলভাবে ব্রেকআউট করতে সক্ষম হবে, তখন এন্ট্রি গ্রহন করতে হয়। ধরুন, প্রাইস চ্যানেলের উপরের লাইন অর্থাৎ, রেসিস্টেন্স লেভেলকে ব্রেক করতে সক্ষম হল। এমতাবস্থায়, ব্রেকআউট কৌশল অনুসরণ করে আমরা তখন Buy এন্ট্রি গ্রহন করবো। এই কৌশলটিও খুবই কার্যকরী।
আশা করি আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে। এই আর্টিকেল সম্পর্কিত বিশেষ কোনও প্রশ্ন থাকলে আমাদের জানাতে পারেন কিংবা নিচে কমেন্ট করতে পারেন। প্রতিদিনের আপডেট ইমেইল এর মাধ্যমে গ্রহনের জন্য, নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করে নিতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো টিউটোরিয়াল দেখার জন্য অনুগ্রহ করে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন। এছাড়াও, যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেইসবুক এবং টেলিগ্রাম চ্যানেলে। এছারাও ট্রেড শিখার জন্য জন্য আমাদের রয়েছে বিশেষায়িত অনলাইন ট্রেনিং পোর্টাল।