প্র্যাকটিস ট্রেডিং Vs. রিয়েল ট্রেডিং – নতুনদের ফরেক্স ট্রেডিং যাত্রায় অনুপ্রাণিত করার জন্য সকল ব্রোকারই Demo কিংবা প্র্যাকটিস ট্রেডিং করার সুবিধা প্রদান করে থাকে। যারা ফরেক্স ট্রেডিং এর বিনিয়োগ এর ক্ষেত্রে একদম নতুন, তাদের জন্য এই প্র্যাকটিস ট্রেডিং এক দিক থেকে আদর্শ।
কারন, এই প্র্যাকটিস ট্রেডিং এর মাধ্যমেই, একজন নতুন ট্রেডার হিসাবে, আপনি ফরেক্স এবং এর সাথে সম্পৃক্ত সকল খুঁটিনাটি বিষয়সমুহ জানতে এবং শিখতে পারবেন। আমরাও সবাইকে ডেমো ট্রেডিং করার জন্য উৎসাহী করে থাকি।
সাধারণত প্র্যাকটিস ট্রেডিং এর মাধ্যমে, আপনি ফরেক্স ট্রেডিং এর বেসিক বিষয়গুলো, নিজের জন্য আদর্শ ট্রেডিং কৌশল নির্ধারণ এবং সঠিক রিস্ক ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা অর্জন করতে পারবেন (কমপক্ষে আমরা এটাই বিশ্বাস করি)। আর একটি বড় সুবিধা হচ্ছে, নিজ থেকে কোনও ফান্ড এই সময় বিনিয়োগ করতে হয় না।
যখন নিজ থেকে ডেমো ট্রেডিং করতে করতে প্রফিট এর রেশিও বাড়িয়ে নিতে পারেন, ঠিক তখনই একজন ট্রেডার চিন্তা করেন, এবার সময় এসেছে প্র্যাকটিস থেকে রিয়েল ট্রেডিং এ যাবার। অন্তত, শতকরা ৮০ ভাগ ট্রেডারই এই চিন্তা করে রিয়েল ট্রেড শুরু করে থাকেন।
ট্রেডার হিসাবে আপনি যখন দেখবেন ডেমো ট্রেডিং এ আপনার সফলতার হার অনেক বেশী তখন আপনার মনে হবে, ফরেক্স ট্রেডিং আর এমন কঠিন কি? এটিতো ধনী হবার খুব সহজ মাধ্যম। প্র্যাকটিস করে আর কি হবে? সময় এসেছে রিয়েল ট্রেড করার।
পার্থক্য
বেশীরভাগ ডেমো ট্রেডারই মনে করে, প্র্যাকটিস ট্রেডিং এর সফলতা রয়েল ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে অনেকবেশী কাজ করবে এবং এই Over Confidence এর থেকেই শুরু হয়, একজন ট্রেডারের আত্মকাহিনী। একটি কথা প্রায়ই আমরা শুনে থাকি –
Confidence = ভাল কিন্তু Over Confidence = খারাপ!
একটি কথা মনে রাখবেন, প্র্যাকটিস ট্রেড এর থেকে প্রফিট এর রেশিও কিংবা ট্রেডিং কৌশল সবসময় রিয়েল ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে কাজে লাগবে না। সুতরাং, প্র্যাকটিস ট্রেড এর সফলতা মানেই যে রিয়েল ট্রেড এর ক্ষেত্রেও একই হবে সেটা ভাবা সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক।
চলুন জেনে নেই কেন….?
আবেগ প্রশ্ন থাকতে পারে, ফরেক্স ট্রেডিং এ আবেগ কি কাজে লাগবে? আপনি যখন ডেমো ট্রেড শুরু করেন তখন ঠিক কি পরিমান ব্যালেন্স নিয়ে শুরু করেন? নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি, শতকরা ৯০ ভাগ ট্রেডারই প্র্যাকটিস ট্রেডিং শুরু করেন $5000 এর উপরের ব্যালেন্স নিয়ে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে ট্রেড শুরু করেন ছোট ছোট লটে। এখানেই হচ্ছে সবচেয়ে বড় ধোঁকা।
বড় বড় ট্রেডিং ব্যালেন্স নিয়ে, প্রাকটিস ট্রেড করছেন ছোট লট কিংবা ভলিউম এর। এই কারনে কখনোই আপনি সঠিক রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বুঝতে পারবেন না।
অথচ একটি বিষয় আমরা প্রায়ই ভুলে যাই, যেই ব্যালেন্স নিয়ে আপনি প্রাকটিস শুরু করেছেন সেই পরিমান এমাউন্ট কি রিয়েল ট্রেডে ডিপোজিট করার সামর্থ্য রাখেন?
আশা করছি আপনার উত্তর হবে না! বড় ব্যালেন্স নিয়ে ট্রেড করার সময় আমাদের ট্রেডিং কৌশল থাকে ভিন্ন রকমের। যার কারনে, প্রাকটিস ট্রেডিং এর সময় লস হবার সম্ভাবনা থাকে অনেক কম।
ভিন্নদিকে আমরা যখন রিয়েল ট্রেডে যাই, তখন একই কৌশল এর মাধ্যমে ট্রেড করলে সাফল্য আসে না। এর একটি প্রধান কারন হচ্ছে এই “আবেগ”। সপ্তাহখানিক কিংবা মাসখানেক প্রাকটিস ট্রেড করে রিয়েল ট্রেড করে প্রফিট এর আশা করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
কৌশলবেশীরভাগ ট্রেডারই প্রাকটিস ট্রেড করার সময় শুধুমাত্র কিভাবে ট্রেড করতে সে বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিভাবে নিজের জন্য ট্রেডিং কৌশল নির্ধারণ করা যায় সে সম্পর্কে কিছুই শিখতে পারেননা।
দোষ আসলে ট্রেডার এর নয়, আমাদের ট্রেডিং সিস্টেম এর। প্রচলিত ট্রেডিং শিখার মাধ্যম, বাংলাদেশের জন্য নেই। কারও কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহন করে ট্রেড শিখবেন সেটাও সম্ভব নয়।
প্রশ্ন হচ্ছে, “প্রাকটিস ট্রেডিং কৌশল” কেন রিয়েল ট্রেডিং এর জন্য ভাল সুফল দিতে পারে না?
একটি উধাহরন দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছি – একজন ক্রিকেটার হিসাবে আপনি যখন নেট প্রাকটিস করেন তখনকার সময় প্রাকটিস করার ধরন থাকে এক রকম। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক কোনও ম্যাচ খেলেন তখন আবার খেলার কৌশল থাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
শুধু তাই নয়, খেলার ধরন এর উপর ভিত্তি করে মাঝে মাঝে খেলোয়াড়দের কৌশলগত বিভিন্ন দিক তাৎক্ষনিক পরিবর্তিত করারও প্রয়োজন হয়ে থাকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন? এক এক সময় খেলার ধরন থাকে এক এক রকম যার কারনে খেলোয়াড়দেরও, নিজেদের খেলার ধরনও পরিবর্তন করে নিতে হয়। বিষয়টি ফরেক্স ট্রেড এর সাথেও জড়িত।
কিন্তু কিভাবে?
ধরুন আপনি ছোট সময়ের ট্রেড (স্কাল্পিং) পছন্দ করেন। সে জন্য আপনার নিজের একটি ট্রেডিং কৌশল রয়েছে। যেটার মাধ্যমে আপনি স্কাল্পিং করে থাকেন। এখন আপনি যদি ছোট সময়ের ট্রেড থেকে বের হয়ে যদি বড় সময়ের ট্রেড করতে চান তাহলে নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি, আপনি পূর্বের ট্রেডিং কৌশল (স্কাল্পিং এর কৌশল) ব্যবহার করবেন। যার পরিনাম হবে ভয়াবহ!
এক এক টাইমফ্রেম অনুযায়ী ট্রেডারকে নিজ কৌশলও পরিবর্তন করে নিতে হয় যার মাধ্যমে যেকোনো ট্রেডিং পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেন। আমরা যখন প্র্যাকটিস ট্রেড করি, তখন একটি ট্রেডিং কৌশল নিয়েই থাকি। একটি উধাহরন দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছি –
ধরুন আপনি Ichimoku Indicator ব্যবহার করতে পছন্দ করেন এবং আপনি এই ইন্ডিকেটর নিয়ে নিজের জন্য ট্রেডিং কৌশল নির্ধারণ করে ট্রেড করে থাকনে। আমরা শুধুমাত্র এই ইন্ডিকেটর কিভাবে কাজ করে সেটা জেনেই এন্ট্রি নেয়া শুরু করি কিন্তু আমরা ভুলে যাই, Ichimoku Indicator নিয়ে স্কাল্পিং করা যায় না।
এখন আপনি যদি এই ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে স্কাল্পিং ট্রেড করতে থাকেন, তাহলে লস এর হাত থেকে আপনাকে কেউই বাঁচাতে পারবে না……
বিনিয়োগ আপনি যখন ডেমো ট্রেডিং করেন, তখন আপনার ট্রেডিং ব্যালেন্স থাকে অনেক বেশী। কখনও কি লক্ষ্য করেছেন? প্র্যাকটিস ট্রেড এর জন্য প্রায় সকল ব্রোকারই অনেক বেশী পরিমাণ ফান্ড প্রদান করে থাকে। বিষয়টি খারাপ বলছি না। কিন্তু সমস্যা হয় যখন আমরা প্র্যাকটিস ট্রেড থেকে রিয়েল ট্রেডে যাই তখন!
প্রাথমিক অবস্থায় খুব বেশী পরিমাণ ট্রেডিং ব্যালেন্স নিয়ে যখন একজন ট্রেডার, প্র্যাকটিস ট্রেড করে নিজের জন্য একটি ট্রেডিং কৌশল নির্ধারণ করেন এবং যখন সেই কৌশল নিয়ে রিয়েল ট্রেড করতে যান, তখন শুধুই হয় লস।
এর কারন কি?
পরামর্শ
প্র্যাকটিস ট্রেডিংকে কাজে লাগাতে হলে অবশ্যই কয়েকটি বিষয় মেনে নিয়ে তারপর ট্রেডিং শিখতে হবে। তাহলে আপনি রিয়েল ট্রেডিং এর সাথে প্র্যাকটিস ট্রেডিং এর যথেষ্ট সাদৃশ্য খুঁজে পাবেন। চলুন বিষয়গুলো জেনে নেই।
- সঠিক লটের ব্রোকার নির্বাচন: অনলাইনে বিভিন্ন লটের ব্রোকার পাওয়া যায়। এক এক ব্রোকারের ট্রেডিং করার সুবিধা এবং ভলিউম নির্বাচন করার পদ্ধতিও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। ডেমো ট্রেডিং এর সময়, অবশ্যই আপনাকে সঠিক লটের ব্রোকার নির্বাচন করে নিতে হবে। এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন “লট/ভলিউম” আর্টিকেল থেকে।
- সঠিক ব্যালেন্স নির্বাচন: আপনি নিশ্চয় ৫০০০, ১০০০০ কিংবা ৫০০০০ ডলার বিনিয়োগ করে ট্রেডিং করবেন না! তাহলে, আপনার সামর্থ্য অনুসারে যেই পরিমাণ ফান্ড ডিপোজিট করে রিয়েল ট্রেডিং শুরু করতে পারবেন, শুধুমাত্র সেই পরিমাণ ফান্ড দিয়েই প্র্যাকটিস ট্রেডিং শুরু করুন। যদি আপনার সামর্থ্য হয় ১০০ ডলার ডিপোজিট করার, তাহলে ডেমো ট্রেডিং সেশনেও ১০০ ডলার ব্যবহার করে ট্রেড করতে থাকুন।
- একটি মাত্র কারেন্সি পেয়ারে ট্রেড করুন: যেহেতু আপনি শিখছেন তাই একাধিক কারেন্সি পেয়ারে ট্রেডিং আপনার জন্য নয়। আপনি যতবেশী কারেন্সি পেয়ারে ট্রেড করতে চাইবেন, ততবেশী মানসিক চাপ সহ্য করতে হবে। সবথেকে ভালো হচ্ছে, একটি মাত্র কারেন্সি পেয়ারে ট্রেড করতে থাকুন। তাহলে সেই কারেন্সি পেয়ারের নাড়িনক্ষত্র আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে।
- প্র্যাকটিস ট্রেডিং কে রিয়েল ট্রেডিং মনে করুন: যেহেতু প্র্যাকটিস ট্রেডিং এর প্রফিট উত্তোলন করা যায় না এবং লস হলেও কোনও সমস্যা নেই, তাই ট্রেডাররা এটিকে গুরুত্ত প্রদান করে না। বিষয়টি সম্পূর্ণ ভুল! প্র্যাকটিস ট্রেডিংকে অবশ্যই রিয়েল ট্রেডিং এর মতন মনে করে ট্রেড করতে থাকুন। মনে করবেন, প্র্যাকটিস ট্রেডিং এর ফান্ড আপনার নিজের টাকা। তাই সময় দিন, ভালো ভাবে বোঝার চেষ্টা করুন। হেলা-ফেলা করে প্র্যাকটিস করলে, কোনও কিছুই শিখতে পারবেন না।
- শিখবেন এবং প্র্যাকটিস করবেন: ফরেক্স এবং ট্রেডিং সম্পর্কে যা যা শিখবেন সেগুলো অবশ্যই প্র্যাকটিস ট্রেডিং এর মধ্যে অনুশীলন করে নিতে হবে। কেননা এখানে যদি বিষয়গুলোকে ভালো করে ব্যবহার করতে না শিখেন, তাহলে রিয়েল ট্রেডিং অবস্থা কখনোই ভালো হবেনা।
আশা করি আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে। এই আর্টিকেল সম্পর্কিত বিশেষ কোনও প্রশ্ন থাকলে আমাদের জানাতে পারেন কিংবা নিচে কমেন্ট করতে পারেন। প্রতিদিনের আপডেট ইমেইল এর মাধ্যমে গ্রহনের জন্য, নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করে নিতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো টিউটোরিয়াল দেখার জন্য অনুগ্রহ করে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন। এছাড়াও, যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেইসবুক এবং টেলিগ্রাম চ্যানেলে। এছারাও ট্রেড শিখার জন্য জন্য আমাদের রয়েছে বিশেষায়িত অনলাইন ট্রেনিং পোর্টাল।