ফরেক্স মার্কেট সম্পর্কে আপনি ইতিমধ্যেই হয়তোবা কারও কাছে থেকে শুনেছেন যার কারনে গুগল থেকে সার্চ করে আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ছেন। ফরেক্স বাংলাদেশের এই সাইটে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের এই সাইটি প্রথম শুরু হয় ২০১৬ সালে এবং তখন থেকেই আমাদের মুল টার্গেট হচ্ছে ফরেক্স ট্রেডিং সম্পর্কে আপনাদের শিক্ষা প্রদান করা। আপনি যদি ফরেক্স ট্রেডিং শিখতে চান, তাহলে আমাদের এই সাইটটি আপনার জন্য অনেকবেশী সহায়ক হিসাবে কাজ করবে।
যাই হোক, আজকের আর্টিকেলটিতে মুলত আমরা ফরেক্স মার্কেট সম্পর্কে আপনাকে কিছু ধারনা প্রদান করার চেষ্টা করবো এতে করে এই মার্কেট সম্পর্কে আপনার কিছু পরিষ্কার ধারনা হবে।
ফরেক্স মার্কেট পরিচিতি
সাধারন অর্থে ফরেক্স মার্কেট হচ্ছে এমন একটি মার্কেট সিস্টেম যেখানে একটি কারেন্সির সাথে ভিন্ন কারেন্সির ভ্যালুর পার্থক্য নিরূপণ করা হয়। ট্রেডিং এর ভাষায় এটিকে বলা হয় বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় কিংবা এক্সচেঞ্জ। এই ব্যাকটিরই সম্পূর্ণ নাম হচ্ছে Forex Exchange কিংবা Forex. যেই মার্কেটে এই মুদ্রা বিনিময় করা হয়ে থাকে সেই মার্কেটকে বলা হয় “ফরেক্স মার্কেট”।
ফরেক্স মার্কেট হচ্ছে মুলত একটি আন্তর্জাতিক বাঁজার যেখানে দুইটি কারেন্সির মধ্যকার পার্থক্যকে কাজে লাগিয়ে ট্রেডার, ট্রেড করে থাকেন। কিভাবে এটি সংঘঠিত হয়, চলুন একটি ছোট উধারহন এর মাধ্যমে জেনে নেয়া যাক।
ধরেন, আপনি বাংলাদেশ থেকে ঘুরতে যুক্তরাজ্য (UK) গেলেন। এখন যেহেতু আপনি ভিন্ন দেশে ঘুরতে গিয়েছেন তাই সেই দেশে খরচ করার জন্য আপনাকে অবশ্যই সেই দেশের মুদ্রা ব্যবহার করতে হবে। লন্ডনে গিয়ে ত আর টাকা ব্যবহার করা যাবেনা!
এই কারনে ঘুরতে যাবার আগে, আপনি ব্যাংক কিংবা লোকাল কোনও মানি-এক্সচেঞ্জার এর কাছ থেকে গিয়ে কিছু ব্রিটিশ পাউন্ড (যুক্তরাজ্যের মুদ্রা) কিনে নিলেন। পাউন্ড ক্রয় করার সময়, আপনি ব্যাংকে যেয়ে ঠিক কি করলেন, একটু চিন্তা করে বলুন।
- ব্যাংকের চার্টে দেখেলেন ১ পাউন্ড = ১৩০ টাকা লিখা রয়েছে।
- আপনি সেই হিসাবে ১,০০০ পাউন্ড ক্রয় করলেন।
- ক্রয় করার জন্য, ব্যাংককে আপনি টাকার মান হিসাবে ১,০০,০০০*১৩০ = ১৩০,০০০ টাকা প্রদান করলেন।
- ব্যাংক আপনার কাছ থেকে “টাকা” গ্রহন করে, পাউন্ড প্রদান করলো।
- আপনি পাউন্ড গ্রহন করে, ব্যাংক থেকে বের হয়ে আসলেন।
এই ধাপগুলোর মাধ্যমে আপনি বৈদেশিক মুদ্রা কিনে নিলেন। এখন এই বিষয়টিকে যদি আমরা অর্থনীতির ভাষায় লিপিবদ্ধ করি, তাহলে দেখতে কেমন হবে? চলুন জেনে নেয়া যাক
- ব্যাংকের চার্টে দেখেলেন 1 GBP = 130 BDT লিখা রয়েছে।
- আপনি সেই হিসাবে 1,000 GBP, BUY করলেন।
- ক্রয় করার জন্য, ব্যাংককে আপনি BDT এর মান হিসাবে 100,000*130 = 130,000 BDT প্রদান করলেন।
- ব্যাংক আপনার কাছ থেকে “BDT” গ্রহন করে অর্থ করলো, GBP প্রদান করলো অর্থাৎ, SELL করে দিল।
- আপনি GBP, BUY করে ব্যাংক থেকে বের হয়ে আসলেন।
এবার চলুন, বিষয়টিকে ব্যাংকিং এর ভাষায় লিখে ফেলি।
ব্যাংকের চার্টে দেখেলেন 1 GBP = 130 BDT লিখা রয়েছে। এই বিষয়টি আমরা চাইলে এভাবে লিখতে পারি
GBP/BDT = 130
যেহেতু আপনি টাকার বিনিময়ে পাউন্ড এক্সচেঞ্জ করে নিলেন তাহলে কি বিষয়টিকে এভাবে লিখা যায়?
GBP/BDT = 130 -> BUY Entry
আশা করছি, আপনি ইতিমধ্যেই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। ঠিক এভাবেই আমরা প্রতিনিয়ত ফরেক্স ট্রেডিং করে যাচ্ছি। সেটি হয়তোবা আপনার চিন্তাতেই কখনও আসেনি। তবে এই ফরেক্স মার্কেট হচ্ছে, দৈনন্দিন লেনদেন এবং অর্থনীতিক কার্যাদি পরিচালনা করার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এই বিষয় সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য অনুগ্রহ করে ফরেক্স কি এই আর্টিকেলটি পড়ে নিতে পারেন। এতে করে আপনি ফরেক্স ট্রেডিং এর বিস্তারিত অনেক বিষয় সম্পর্কে ভালো করে জানতে এবং বুঝতে পারবেন।
ফরেক্স মার্কেটের নিয়ন্ত্রক
ফরেক্স মার্কেট হচ্ছে একটি বিকেন্দ্রীভূত বাঁজার ব্যবস্থা যার নিয়ন্ত্রণ কোনও একক দেশ, অর্থনীতি, ব্যাক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের কাছে নেই। ইংরেজি ভাষায় যেটিকে বলা হয় “Decentralized Market”. যেমন ধরুন, আপনি লোকাল কোনও ব্যাংক থেকে যখন বৈদেশিক মুদ্রা এক্সচেঞ্জ করবেন সেটির মান কেমন হবে, সেটি নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থাৎ, “বাংলাদেশ ব্যাংক”।
সহজ কথায়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যত ধরনের মুদ্রার সাথে সম্পৃক্ত কার্যাদি পরিচালিত হয় সেটির একক নিয়ন্ত্রণ থাকে এই বাংলাদেশ ব্যাংক এর কাছে। কেননা, বাংলাদেশ ব্যাংকই, “টাকা” এর মান নিয়ন্ত্রণ করে এবং সেটি বজায় রাখে। ঠিক একই রকম করে, ডলার কে নিয়ন্ত্রণ করে যুক্তরাষ্ট্র, পাউন্ডকে নিয়ন্ত্রণ করে যুক্তরাজ্য, রুপিকে নিয়ন্ত্রণ করে ভারত, ইত্যাদি।
কেননা এই সবগুলো দেশই তাদের নিজ নিজ মুদ্রার বাঁজার পরিচালনা করে তাই লোকাল মুদ্রার উপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর প্রভাব থাকে অনেকবেশী।
এখন যদি ফরেক্স মার্কেটের কথা বলি, যেহেতু ফরেক্স মার্কেটের কোনও নিয়ন্ত্রক নেই, তাই এই মার্কেটকে কেউই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা যার কারনে এই ফরেক্স মার্কটে বিদ্যমান কারেন্সি পেয়ারগুলোর দাম কমে আসে কিংবা বৃদ্ধি পাওয়া নির্ভর করে, আপনার এবং আমার মতন এরকম লক্ষাধিক ট্রেডারের উপর।
অর্থনীতির ভাষায় যেটিকে বলে, চাহিদা এবং জোগানের তারতম্য এর কারনে। যাই হোক এই বিষয় ভিন্ন কোনও আর্টিকেলে আলচনা করা যাবে।
অনেকসময় শুনে থাকবেন, বাংলাদেশ স্পট মার্কেট থেকে জ্বালানী তেল কিংবা গ্যাস কিনছে। অর্থাৎ, On the Spot যেই প্রাইস কিংবা মুল্য থাকে সেটি ব্যবহার করে কোনও কিছু ক্রয় কিংবা বিক্রয় করাকেই বলা হয় “SPOT TRADING”. ফরেক্স মার্কেটও হচ্ছে এই স্পট মার্কেটের একটি বিশেষ অংশ।
এতক্ষণ আপনাকে ফরেক্স মার্কেট সম্পর্কে কিছু ধারনা প্রদান করার চেষ্টা করেছি। ফরেক্স এবং ট্রেডিং সম্পর্কে জানার জন্য অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল আমাদের রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করে আপনি ধারাবাহিকভাবে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন।
এছাড়াও, আপনি চাইলে অনলাইন ট্রেনিং পোর্টাল থেকে ফরেক্স বেসিক এই ট্রেনিং কোর্সটিতে অংশ নিতে পারেন। এই কোর্স থেকে ফরেক্স মার্কেট, ফরেক্স ট্রেডিং, আয় করার মাধ্যম, কাজ করার মাধ্যম ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্যাদি প্রদান করা হয়েছে। অনুগ্রহ করে কোর্সটিতে অংশ নিয়ে শিখে নিবেন।
আশা করি আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে। এই আর্টিকেল সম্পর্কিত বিশেষ কোনও প্রশ্ন থাকলে আমাদের জানাতে পারেন কিংবা নিচে কমেন্ট করতে পারেন। প্রতিদিনের আপডেট ইমেইল এর মাধ্যমে গ্রহনের জন্য, নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করে নিতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো টিউটোরিয়াল দেখার জন্য অনুগ্রহ করে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন। এছাড়াও, যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেইসবুক এবং টেলিগ্রাম চ্যানেলে। এছারাও ট্রেড শিখার জন্য জন্য আমাদের রয়েছে বিশেষায়িত অনলাইন ট্রেনিং পোর্টাল।