Lockdown – এই বছরের শুরু থেকে মহামারী Covid19 ভাইরাস এর সংক্রমণের কারনে প্রায় সকল দেশ অনিশ্চিত লকডাউন এর পথে যায় যার কারনে অচল হয়ে পড়ে বিশ্ব অর্থনীতি। বড় বড় সকল দেশ বেশকিছু এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠার কারনে বেশ কিছু প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করলেও খুব বেশী কাজে সেটা আসেনি যার কারনে এখন পর্যন্ত অর্থনীতির চাকা স্বাভাবিক হয়নি।
অন্যদিকে সবচেয়ে বেশী ক্ষতির সম্মুখীন হয় জালানি তেল এর দাম। অপরিশধিত জালানি তেল এর দাম ইতিহাসের রেকর্ড পরিমাণ নিচে নেমে আসে যেখানে প্রতি ব্যারেল তেল এর এর জন্য উৎপাদকরা, ক্রেতাদের মুল্য পরিশধ করতে বাধ্য হয়। এর আগে পৃথিবী কখনও এমন তেল এর মুল্য দেখেনি।
প্রতি ব্যারেল তেল এর মুল্য নেমে আসে নেগেটিভ ফিগারে যা গিয়ে পৌছায় -40 ডলারে। অর্থাৎ, প্রতি ব্যারেল তেল বিক্রয় করার জন্য উৎপাদকরা, ক্রেতাদের 40 ডলার করে দিয়েছে। যার কারনে, এক সময় সকল ধরনের তেল এর ট্রেডিং ব্রোকার বন্ধ করে দেয়। এপ্রিল মাসের মাঝ সময়ে এসে জ্বালানি তেল এর এই বিপুল পরিমাণ দর পতন দেখতে পায় পৃথিবী।
Lockdown এর প্রভাব
উপরের যেই তিনটি চার্ট আপনাদের জন্য শেয়ার করেছি, সেগুলো হয়েছে মুলত এই লকডাউন এর কারনেই। কেননা, এই সময়ে প্রতিটি দেশ তাদের উৎপাদন বন্ধ করে দেয় কিংবা কমিয়ে নিয়ে আসে যার প্রভাবে অর্থনীতি হয়ে পড়ে স্থবির। যার প্রভাব এখন পর্যন্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি। এখন পশ্ন হচ্ছে, যদি আবারও এই লকডাউন হয় তাহলে ফরেক্স ট্রেডিং এর উপর প্রভাব কি রকমের হবে?
তাহলে প্রথমে চলুন কয়েকটি কারেন্সি পেয়ার নিয়ে আলোচনা করা যাক –
EUR/USD এর প্রভাব – ইউরোপের আপ্তাধিন যেই দেশগুলো রয়েছে তাদের প্রধান আয়ের উৎস হচ্ছে মুলত পর্যটন এবং এভিয়েশন খাত। বছর এর শুরুর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এর প্রায় সবগুলো দেশ lockdown ঘোষণা করে যার কারনে এভিয়েশন এবং পর্যন্ত এই দুই খাতে ব্যাপক আকারে ধস নেমে আসে যা এখনও ইউরোপ দেখছে। অর্থাৎ, একদিক থেকে তাদের অর্থনীতি থমকে আছে। যার প্রভাবে মধ্য মার্চে মেজর কারেন্সি পেয়ার EUR/USD এর প্রাইস নেমে আসে প্রায় ৮০০ পিপ্স এরও বেশী এবং তাও সেটি মাত্র ১০ দিনের মধ্যে।
যদিও প্রাইস পুনরায় কারেকশন করতে সক্ষম হয় কেননা মহামারীর প্রকোপ কিছুটা কমে আসার কারনে সকল দেশই তাদের লকডাউন এর বিধিনিষেধ শিথিল করেছে। তবে নতুন করে গত সপ্তাহে ইউরোপ এর বেশকিছু দেশ পুনরায় লকডাউন এর ঘোষণা দিলে এর বিরুপ প্রভাব পড়ে এই কারেন্সি পেয়ারটির উপর।
GBP/USD এর প্রভাব – মহামারী জনিত সময়ে সবথেকে খারাপ সময় পার করেছে GBP কারেন্সি। এক দিক থেকে ব্রেক্সিট চুক্তির সমস্যা এবং অন্যদিকে মারাত্মক লেভেল এর সংক্রমণ হার কারেন্সিটির দরপতন এর বড় কারন হয়ে দারায়। যার কারনে মার্চ মাসের মাঝে এসে মাত্র ৯ দিনের ব্যবধানে কারেন্সি পেয়ারটি সর্বনিম্ন প্রাইস এর রেকর্ড করে। এই ৯ দিনে GBP/USD কারেন্সি পেয়ার এর দরপতন হয় প্রায় ১৮০০ পিপ্স এরও অধিক।
Lockdown তাহলে খারাপ?
আসলে বিষয়টি এমন না তবে যদি একটি দেশের অর্থনীতির হিসাব করেন তাহলে এর থাকে ভয়ানক কিছুই আর হতে পারেনা। প্রতিটি দেশ এমন একটি সময়ে এসে লকডাউন এর পথে হেঁটেছে যখন তাদের আর কিছুই করার মতন ছিল না। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথম এই প্রাণঘাতী ভাইরাস এর পরিচিতি পায় চীন এবং এরপর বিগত ১১ মাসে ২৯৬ দেশে ছড়িয়েছে এই ভাইরাস এর ব্যাপ্তি। আক্রন্ত হয়েছেন কয়েক কোটি মানুষ এবং মৃত্যুবরণ করেছেন প্রায় ১০ লাখ এরও বেশী।
Lockdown এবং Trading
আর্টিকেল এর শুরুতেই বেশকিছু চার্ট এবং কারন সম্পর্কে আপনাদের জানিয়েছি। এগুলোর সবই হয়েছে এই লকডাউন এর কারনে। যার কারনে বিভিন্ন কারেন্সি পেয়ারগুলোর অস্বাভাবিক মুভমেন্ট আমরা দেখতে পাচ্ছি। যতদিন পর্যন্ত এই খারাপ সময় থাকবে ততদিন পর্যন্ত আগের অবস্থানে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয় এবং ট্রেডার হিসাবে আপনার কিংবা আমাদেরও কিছুই করার মতন থাকবে না। তবে আমরা যদি কিছু বিষয় মেনে চলি তাহলে কিছুটা হলেও নিজের ব্যালেন্স এবং ট্রেডিং একাউন্টকে নিরাপদে রাখতে পারবো।
- এই সময়ে লংটার্ম ট্রেডিং কৌশল কাজ করছে না। সুতরাং, পরামর্শ থাকবে ছোট ছোট সময়ের টাইমফ্রেম থেকে ট্রেড করে প্রফিট কিংবা লস যেটাই হোক সেটি নিয়ে বের হয়ে আসা।
- কোনও এন্ট্রিকে পরের দিন এর জন্য না রাখা হবে বুদ্ধিমানের কাজ। যেমন GBP, CHF, JPY এর যে কারেন্সিগুলো রয়েছে এবগুলোর মুভমেন্ট হতে পারে অনেকবেশী এবং যদি প্রাইস এর গ্যাপ খুব বেশী পরিমানে থাকে তাহলে ব্যালেন্স স্টপ-আউট হবার সম্ভাবনা থাকবেও অনেক বেশী।
- যেহেতু মার্কেট এর মুভমেন্ট বেশী, সেক্ষেত্রে আদর্শ হবে স্কাল্পিং এর মাধ্যমে ট্রেড করা। ছোট ছোট সময়ে ট্রেড করে প্রফিট করে বের হয়ে আসবেন।
- যেকোনো ধরনের স্টক ট্রেডিং, গোল্ড কিংবা তেল এর উপর ট্রেডিং করা থেকে বিরত থাকুন। কেননা এই ট্রেডিং ইন্সট্রুমেন্টগুলো খুব বেশী পরিমাণ মুভমেন্ট করতে পারে এবং কোনও নির্দিষ্ট ট্রেন্ডে থাকবেও না।
- যাদের ট্রেডিং একাউন্ট এর ব্যালেন্স এর পরিমাণ কম, তারা অনুগ্রহ করে এই সময়টুকুতে নতুন এন্ট্রি গ্রহন করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।
- স্টপলস অর্ডার ব্যবহার করে যারা এন্ট্রি গ্রহন করেন তারা অনুগ্রহ করে কিছুটি প্রাইস গ্যাপ হিসাব করে তারপর স্টপলট অর্ডার সেট করবেন কেননা সেটি না হলে এই স্টপলস হিট করার সম্ভাবনা থাকবে বেশী।
- কোনও ধরনের পেন্ডিং অর্ডার রেখে পরের দিন এর জন্য অপেক্ষা করবেন না। আপনি যতক্ষণ মার্কেটে সময় দিতে পারেন ততক্ষণই এই পেন্ডিং অর্ডার রাখবেন। যদি ট্রেড ক্লজ করে দেন তাহলে সাথে পেন্ডিং অর্ডারগুলোও তুলে দিবেন। এতে করে ওই সময়ে কোনও অঘটন হলে ব্যালেন্স এর কিছুই হবে না।
- ৩ নম্ভেবর, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন এই সময়ে ডলার এর সাথে সম্পৃক্ত যেকোনো কারেন্সি পেয়ার এর এন্ট্রি থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।
আশা করি আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে। এই আর্টিকেল সম্পর্কিত বিশেষ কোনও প্রশ্ন থাকলে আমাদের জানতে পারেন কিংবা নিচে কমেন্ট করতে পারেন। প্রতিদিনের আপডেট ইমেইল এর মাধ্যমে গ্রহনের জন্য, নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করে নিতে পারেন। এছারাও যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেইসবুক এবং কমিউনিটি পোর্টালে। সেই সাথে রয়েছে আমাদের ভিডিও ট্রেনিং লাইব্রেরী। এছারাও ট্রেড শিখার জন্য জন্য আমাদের রয়েছে অনলাইন ট্রেনিং পোর্টাল।